বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিঃ, বাগেরহাট। ১৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বকেয়া থাকায় সোমবার (২৩ মে) বিকেলে বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাস শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীরা। সন্ধ্যা নামলে এটি ভুতুড়ে বাসটার্মিনালে পরিনত হয়।
২০১৬ সাল থেকে বাগেরহাট পৌরসভার কাছে বাসটার্মিনালের হিসাবে বিদ্যুৎবিল বকেয়া রয়েছে জানিয়েছেন ওজোপাডিকো। অন্যদিকে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতি বলছেন বিদ্যুৎ বিল বাবদ নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছেন পৌরসভাকে। বাগেরহাট পৌরসভা বলছে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করা হবে।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পক্ষে মেয়র বাগেরহাট পৌরসভা নামের এই হিসেবে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে।
শুধু বাগেরহাট বাস টার্মিনাল নয়, বাগেরহাট পৌরভবন, স্ট্রীট লাইটসহ বিভিন্ন ধরণের ১৮টি হিসেবে বাগেরহাট পৌরসভার কাছে আরও প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ওজোপাডিকোর।
বাস শ্রমিক সঞ্জিব বিশ্বাস বলেন, বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে একদিন বাস রাখলে ঢাকার পরিবহনের জন্য ৮০ টাকা এবং লোকাল পরিবহনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়। এখানের টয়েলেট গুলোও আমাদের টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। আমরা নিয়মিত টাকা দিচ্ছি তাহলে কেন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
শ্রমিক মোঃ মাহতাব হোসেন বলেন, রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের বাস ছাড়ে বাগেরহাট স্ট্যান্ড থেকে। বিদ্যুৎ না থাকায় খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ এর বিষয়ে একটা সমাধান হোক ।
বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আব্দুল বাকি বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতিমাসে পৌরসভার মার্কেটিং অফিসারের কাছে টাকা দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এই টাকা নিয়মিত দেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় কয়েক হাজার বাস শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট বাস টার্মিনালে যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া বাস টার্মিনালে থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল বাবদ টাকা দেয় বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য হিসেবে যে সাড়ে চার কোটি টাকা রয়েছে ওই টাকার বিপরীতে মাঝে মাঝে কিছু টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া জুন মাসের শেষে রাজস্ব খাতের হিসেব করে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান তিনি।
২০০২ সালের অক্টোবরে বাগেরহাট জেলা শহরের গোবরদিয়া মৌজায় বাস টার্মিনাল স্থাপন করে পৌরসভা। বাগেরহাট পৌরসভা প্রতিবছর বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড, দোকান, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দুটি পাবলিক টয়েলেট ইজারা দিয়ে বিপুল পরিমান টাকা আয় করেন।
পৌরসভা ছাড়াও ওজোপাডিকো বাগেরহাট জেলা পুলিশের কাছে ২৫ লক্ষ ১৯ হাজার, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে ৪ লক্ষ ২১ হাজার, পিসি কলেজে ৩ লক্ষ ২০ হাজার, বাগেরহাট মেডিকেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে ২ লক্ষ ২২ হাজার, রেলরোড জামে মসজিদে ৩ লক্ষ, শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।
ওজোপাডিকোর বাগেরহাটের সহকারি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। বকেয়া আদায়ে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং কারও কারও বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। বকেয়ার আদায়ের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কিমিটির সভায় বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে পারি।
খুলনা গেজেট/ এস আই