খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ১০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বাড়ছে উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি, সন্ধ্যায় শপথ
  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

সত্য হোক নিত্য সঙ্গী

কাজী মোতাহার রহমান

মাসাধিককাল জুড়ে বিবৃতি পাল্টা বিবৃতির ঝড় বইছে। বলা চলে পুলিশ ও সাংবাদিকরা মুখোমুখি। পুলিশের বিবৃতিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে সারাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা স্বোচ্চার হয়েছেন। সংবাদকর্মীরা নির্ধিদায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির প্রেক্ষিতে এডিটরস গিল্ডের বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবদানকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে। এডিটরস গিল্ড বিবৃতিতে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ত্যাগ, জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা, করোনাকালীন সময়ে মানবিক আচরণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় তাদের সাহসিকতা ইত্যাদি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এখন হচ্ছে। এডিটরস গিল্ড বিবৃতিতে বলেছে, গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করে দেওয়া এমন বিবৃতি সমাজে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদকদের কাছে দেয়া চিঠিতে গণমাধ্যমকে সতর্ক করেছেন। চিঠির ভাষ্য ছিল, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোন ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ। আমাদের পবিত্র সংবিধানে ৩৯ ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করা অত্যাবশ্যক। সেখানে সুস্পষ্টভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতা, পৃথিবীজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে এই শব্দ। ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের কাছে দারুণ আকাঙ্খিত এটি। মানুষ নির্ভয়ে, বিনা প্রহরতায় অনুমোদনগ্রহণের বাধ্যতা ব্যাতিরেকে নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার বাসনা রাখে।

সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার স্লোগান তুলে ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের সময় নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা হয়। সেখানে বাক স্বাধীনতাকে অনিবার্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সে ঘোষণায় ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয় নিজের চিন্তা-ভাবনা ও মতামতকে মুক্তভাবে বিনিময় করা নাগরিকের মূল্যবান অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনতা অনুযায়ী বলতে, লিখতে এবং তথ্য প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে তার জন্য সেই দায়ী থাকবে। অপব্যবহার আইন দ্বারা সংজ্ঞায়িত থাকবে। ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাপটগুলো সবাইকে স্মরণ রাখা প্রয়োজন। দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে যেয়ে আমরা কারও মুখোমুখি হতে চাই না। প্রতিদ্বন্দ্বি হতে চাই না। সত্যকে গোপন করা গণমাধ্যমের নীতিমালার মধ্যে আসে না। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট বলেছিলেন যদি কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, তখন মতপ্রকাশ ও শিক্ষার স্বাধীনতা জনসমর্থনের মতো মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার অর্থহীন হয়ে পড়বে। সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বলতে হয়, গত পাঁচ বছরে সকল নীতিমালা মেনে খুলনা গেজেট সাংবাদিকতায় নতুনত্ব এনেছে। এ কারণেই গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের সংবাদ যথাসময়ে আমরা পাঠকের কাছে পৌছাতে সক্ষম হয়েছি। প্রিন্ট ভার্সনের চাহিদা অনেকখানি কমেছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে অনলাইন পত্রিকার বিকাশ দ্রুত হচ্ছে। দক্ষিণ জনপদে আমরা এই গৌরব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আর এই কৃতিত্বের দাবিদার আমাদের সকল সংবাদ কর্মীরা।

আগামী দিনগুলোতে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে সক্রিয় হব এটাই প্রতিষ্ঠাবার্ষকীতে আমাদের অঙ্গীকার। আজকের এই শুভ মুহুর্তে আমরা সকল মহলে দাবি জানাবো সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার সংশোধন করা প্রয়োজন। অন্যথায় মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে এ ধারাগুলো অন্তরায় হয়ে দাড়াবে। আশা করবো সকল মহল আমাদের দাবিতে সোচ্চার হবেন।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, খুলনা গেজেট, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক ও লেখক।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!