দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় সমমনা ইসলামী দলগুলো। তবে তারা আরও কিছু দাবিতে ঐক্যমতে পোষণ করেছে। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, নেজামে ইসলাম পার্টি। এই চার দল সম্মিলিত ভাবে গত বুধবার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন।
এতে তারা ৯ টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান। তার মধ্যে একটি, চলতি বছরেই নির্বাচন। দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া ৯ দফা দাবি ও প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, সংবিধানের মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’পুন:স্থাপন করতে হবে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ‘বহুত্ববাদ’ সংবিধানে সংযুক্ত করা যাবে না; সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা ও শিল্পখাতে নতুন গ্যাস সংযোগে ৩৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে; গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; মুসলমানদের সম্পদ লুট ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের জন্য ভারতে পাশকৃত মুসলিম ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিল করতে হবে; প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে; পিলখানায় বিডিআর হত্যা, শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা, জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে; হেফাজতের নেতা কর্মীসহ আলেম-উলামাদের নামে দায়েরকরা ও অন্যান্য রাজনৈতিক মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে; ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা পুনর্বাসনে রোধ করতে হবে।
ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামীলীগের বিচার করতে হবে। এ জন্যে জুলাই অভ্যূত্থান সময়ের মত জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে। এদিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, তারা আগে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মনে করছে প্রয়োজনীয় সংস্কার যদি দুই-এক মাস বা এ বছরের মধ্যে শেষ হয়, তাহলে তারপর তারা নির্বাচন দিতে হবে।
এ বিষয়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য একবারেই স্পষ্ট। নির্বাচনই সমস্ত সমস্যার সমাধান না। এ দেশে অনেক নির্বাচনই হয়েছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। নির্বাচন নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জুলাইয়েই হোক এটা দেখার বিষয় নয়।
বিষয় হলো সংস্কার। মানুষ যেনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে, প্রশ্নবিদ্ধ যেনো না হয়।
তিনি বলেন, এখন যে প্রশাসন আছে, তাদের দিয়ে নির্বাচন করা হলে, খুনাখুনির নির্বাচন হবে। এ অবস্থায় গত আওয়ামী লীগের আমলে যতো হত্যা না হয়েছে, তার চেয়ে বেশী হবে। এখন এই চাঁদাবাজ ও দখলবাজরা সব দখল করে নিবে। সেখানে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে না, মানুষ ভোট দিতে পারবে না। সংস্কারের পরে কালকে যদি পরিবেশ হয়, তাহলে কালকেই নির্বাচন চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কার পরে, মানুষ কমপক্ষে যেনো কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, কেন্দ্র দখল-জালভোট না হয়, শক্তি প্রয়োগ না হয়, এরকম একটা পরিবেশ যে সময়েই হবে, তখনই নির্বাচন চাই। ডিসেম্বর আর জুলাই না, এই পরিবেশ যদি কালকে সৃষ্টি হয়, কালকেই নির্বাচন দিক।
প্রসঙ্গত গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। যারা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমীর ড. শফিকুর রহমানও প্রায় একই সময়ে অর্থাৎ আগামী রমজান মাসের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেন।
ইসলামী সমমনা দলগুলোর বুধাবারের ঐ বৈঠকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারীসহ দলগুলোর মহাসচিব ও অন্যান্য সিনিয়র নেতার।
খুলনা গেজেট/ টিএ