খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

শ্রীলংকাকে ৩৩ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে এমনেতেই অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রচন্ড গরমের মধ্যে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের খেলা শুরুর সিডিউল রাখা হয় দুপুর একটায়। কাটফাটা রোদে এমনেতেই হাঁসফাঁস করছেন মানুষ। প্রাণ ওষ্ঠাগত গরমের মধ্যে টাইগারদের ঘাম ছুটিয়ে ছাড়ল শ্রীলংকা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩ রানের জয়টা যে সত্যিই দরকার ছিল খুব। গত দশ ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা নেই। সবশেষ জয়টাও এসেছিল ঘরের মাঠে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা টেস্টে ড্র, বাকি সবগুলোতেই হারতে হয়েছে। কেবল জয়-পরাজয়ই মূল বিষয় হলে হতো, এর মাঝে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে স্পর্শ করে গেছে নানা বিতর্ক।

সাকিব আল হাসান জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন বহুদিন বাদে। অনেক দিন পর দলটাকে দেখে ঠিক ‘পূর্ণশক্তির’ মনে হচ্ছিলো। এই জন নেই, ওই জন নেই হাহাকারও ছিল না। এমনিতেও বাংলাদেশ ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে শ্রীলঙ্কার চেয়ে। প্রত্যাশা তাই স্বভাবতই ছিল বেশি।

কিন্তু প্রত্যাশার সঙ্গে কি প্রাপ্তি মিলে সবসময়? উত্তরটা সন্দেহাতীতভাবেই ‘না’। প্রত্যাশা কি লিটন দাসের কাছেও কম ছিল? তা তিনি যতই ব্যর্থ হন আর যা কিছুই করুন। দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান, কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলেন সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যেই সেরা। স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান, তার শট মুগ্ধতাও ছড়ায়। সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু রানটাও তো করতে হবে!

সেটা তিনি বোধ হয় ভুলেই যান। আজও যেমন শূন্য রানেই ফিরেছেন সাজঘরে। বাংলাদেশের রানও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি তখন, স্কোরকার্ডে মাত্র ৫ রান। তার আগের চার ইনিংসও তো যাচ্ছে তাই। সংখ্যায় সাজালে সেটা হয় এমন, ২১ বলে ২১ রান, ৪ বলে ০ রান, ৩৬ বলে ১৯ রান ও ৪ বলে ০ রান।

লিটন দাসের অধ্যায় কবে থামবে, সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে উঠছে। আমরা এই লেখায় আপাতত সেদিকে আর না যাই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এখন তামিম ইকবাল। তিনি আজ তার ক্যারিয়ারের ৫১তম সেঞ্চুরি করেছেন, কিন্তু তবুও তাকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে যেটুকু সমালোচনা, তা কি কমবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে ভাবনা-চিন্তা না করেই ‘না’ বলে দেওয়া যায়। কারণ তার রান করা নয়, প্রশ্নটা ‘ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ’ নিয়ে। তামিম সেখানে সমস্যা দেখেন না। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও খুব বেশি বদলায়নি সেটা। ৭০ বল খেলে ৫২ রান করেছেন, তার মধ্যে ৩০ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে।

তামিম ছাড়াও আরও দুইজন ফিফটি করেছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। তাদের মধ্যে মুশফিক এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকঠাক। তার ব্যাটে অনেক দিন ধরেই বড় রান নেই। দেশের সেরা ব্যাটসম্যানের ব্যাটে এমন রানের আকাল ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশকেও।

মুশফিক এই ম্যাচে খেলছিলেন পরিস্থিতি বুঝেই। সবাই প্রহর গুণছিল কখন সেঞ্চুরিটা করবেন। কিন্তু রিভার্স সুইপ খেলার ব্যর্থ চেষ্টায় সেই প্রহর গোণা শেষ পর্যন্ত থেকেছে আক্ষেপ হয়ে। ৮৭ বলে তার ৮৪ রানেই ইনিংস থেমেছে লাকসান সান্দাকানের বলে, ইসুরু উদানার বলে।

ফিফটি করা আরেকজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থেকেছে। ইনিংসের শেষদিকে ব্যাট করেও ৭৬ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি। কচ্ছপ গতির এই ব্যাটিং অবশ্য বাংলাদেশকে শেষ অবধি আর ভোগায়নি। আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৩ চারে ২২ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৫৭ রানের সংগ্রহ। যেটা জয়ের জন্য যথেষ্টই হয়েছে।

কিন্তু তবুও যত বড় জয় পাওয়ার কথা ছিল, সেটা আসেননি। তাতে বাংলাদেশের বোলারদের চেয়ে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান ওয়ানিন্দো হাসারাঙ্গার কৃতিত্বই বেশি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এমনভাবে খেললেন, ব্যাটিংটা কত সহজই না মনে হলো!

বাংলাদেশের বোলাররা তেমন পাত্তাই পেলেন না। অথচ তার স্বদেশি ব্যাটসম্যানরা তো শুরুতে বুঝেই উঠতে পারলেন না। বিশেষত মেহেদি হাসান মিরাজকে। ৯৭ রানেই পাঁচ উইকেট ছিল না শ্রীলঙ্কার। তার তিনটিই নিয়েছিলেন মিরাজ। শেষে পর্যন্ত এই ধাক্কাটাই বোধ হয় আর সামলাতে পারেনি সফরকারীরা।

তা হাসারাঙ্গা যত ভালো ব্যাটিংই করুন। তিনি যতক্ষণ টিকে ছিলেন, ততক্ষণ অবশ্য মনে হচ্ছিলো কিছু একটা হলেও হতে পারে। কিন্তু ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৬০ বলে ৭৪ রান করে তিনি যখন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন। এরপর আর বাংলাদেশের জয় নিয়ে কোনো সংশয়ই থাকেনি।

বাকি কাজটা করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাঝে মাটিতে শুয়ে পড়ে তার কাতরানো ভয় ধরিয়েছিল কিছুটা। বড় কোনো ইনজুরিতে পড়ে গেলেন কি না, পরে অবশ্য আবারও বোলিংয়ে ফিরে আসায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। মিরাজ ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বোলার, সেরা খেলোয়াড় অবশ্য মুশফিকুর রহিম।

মুস্তাফিজ তিন উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের বোলিংয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটেছে। স্বীকৃত ক্রিকেটে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এক হাজার উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে দারুণ আর স্বস্তির জয়। রোমাঞ্চকর কিংবা উচ্ছ্বাসের কিছু না হলেও, এই জয়টা সত্যিই খুব দরকারি ছিল।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!