খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

প্রকৌশলীর সাথে ঠিকাদারের যোগসাজশ

শ্যামনগরে সড়ক নির্মাণে পুকুর চুরির অভিযোগ

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পরানপুর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক এর ‘মেজর মেইনটেন্যান্স’ কাজে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এজিং ও ম্যাকাডাম যেনতেনভাবে সম্পন্নের পর কার্পেটিং এর ক্ষেত্রে রীতিমত পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ইটসহ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের পাশাপাশি ‘সিডিউল’ অনুযায়ী প্রাইম কোর্ট পর্যন্ত লাগানো হয়নি।

গুণগত মান রক্ষা না হওয়ায় সদ্যই সম্পন্ন হওয়া উপজেলা সদরের সাথে কৈখালী ইউনিয়নের যোগাযোগ রক্ষাকারী এ সড়ক বর্ষার আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সহায়তায় কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার এমন তুঘলকি কান্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের শুরু থেকে বার বার ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়রকে ‘সিডিউল’ অনুযায়ী কাজের অনুরোধ করা হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। যার ফলে কাজ শেষ হওয়ার সপ্তাহ না পার হতেই কিছু স্থানে পাথরের টুকরা উঠে যেতে শুরু করেছে। ঠিকমত পিচ না দেয়ায় অনেকাংশে পাথরের টুকরার মধ্যে বিস্তর ফাঁকা রয়েছে এবং কোন কোন স্থানের এজিং দেবে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

উল্লেখ্য, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৈখালী ইউনিয়নের পরানপুর বাজার এলাকায় ১৫শ’ মিটার রাস্তায় ‘মেজর মেইনটেন্যান্স’ কাজ অনুমোদন হয়। টেন্ডার আহবানের পর সড়কটির কাজের দায়িত্ব পায় খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিলান ট্রেডার্স। সময়মত কাজ শুরু করলেও তড়িঘড়ি করে গত তিন/চার দিন আগে ৫৫ (চুক্তি ৫২) লাখ টাকার কাজটি সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ উঠেছে, অধিক মুনাফার লোভে ১৫শ’ মিটারের মধ্যে প্রায় ৬শ’ মিটার রাস্তার ‘থিকনেস’ ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেয়া হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী ৪০ মিলি ‘থিকনেস’ বজায় রাখার নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রায় ৬শ’ মিটার জায়গায় ‘থিকনেস’ রাখা হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ মিলি।

স্থানীয়দের দাবি, ‘থিকনেস’ কম রেখে কাজ করার সময় কাকতালীয়ভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলীসহ তার দপ্তরের কেউ কর্মক্ষেত্রে ছিল না। শেষ অংশের কাজ করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দ্রুততার আশ্রয় নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়র এর সাথে ঠিকাদারের যোগসাজশের কারণে এমনটা হয়েছে। সড়কের শেষ অংশের কাজ রাতের বেলা হয়েছে দাবি করে তারা জানায়, নিম্নমানের ইট ব্যবহারসহ ম্যাকাডাম এর সময় নিচের রাস্তা ভালভাবে গুঁড়িয়ে নেয়া হয়নি। কোন কোন স্থানে পূর্বের পিচের উপর পিচ দিয়ে নামকাওয়াস্তে প্রাইম কোট করা হয়েছে।

পরানপুর বাজারের আব্দুল জলিল বলেন, শুরু থেকেই ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়রকে বার বার বলা সত্ত্বেও তারা রাস্তা নির্মাণে মারাত্মক ফাঁকিবাজি করেছে। পরানপুর হাইস্কুল এর সামনের রাস্তায় তারা আগের পিচের রাস্তা যেনতেনভাবে খুঁড়ে পিচ ঢেলে রোলিং করেছে।

কাটাখালী গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, কোন রকমে এজিং সম্পন্নের পর ম্যাকাডাম করে শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে রাতের বেলা কার্পেটিং শেষ করা হয়েছে। ১৫শ মিটার রাস্তার সর্বত্র সমানভাবে ‘থিকনেস’ রক্ষা করা হয়নি। কাজের মধ্যে অভিযোগ উঠলে বাইরের কয়েকজন এসে পরীক্ষা করে প্রায় ছয়শ মিটার রাস্তায় নামমাত্র কার্পেটিং এর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

বর্ষাকাল আসতে আসতে এ রাস্তা আবারও নষ্ট হবে দাবি করে স্থানীয় খোরশেদ আলম বলেন, শুরু থেকে রাস্তা নির্মাণে গুনগত মান রক্ষা করা হচ্ছিল না। এসময় এলাকার মানুষ এভাবে কাজ না করার অনুরোধ জানালেও ঠিকাদার বা ইঞ্জিনিয়র তাতে কর্ণপাত করেনি। কোন কোন ক্ষেত্রে পিচের উপর দিয়ে পিচ দিয়ে গেছে, তাই সাতদিন পার না হতেই পিচ উঠে যাচ্ছে বলেও দাবি তার।

অভিযোগ উঠেছে, যেসব স্থানের কাজে ন্যূনতম মান রক্ষা পায়নি, ঐসব অংশের কাজের সময় কৌশলে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত থেকেছে। দু’পক্ষের আপোষরফায় এমন তুঘলকি কান্ডে স্থানীয়দের কোন আপত্তিকে কানে তোলা হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, শুরুতে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করা হয়। এক পর্যায়ে পরিষদ এর পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হলেও কাজ হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাইম কোট ঠিকমত মারা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, গুণগত মান রক্ষা না করায় বর্ষা মৌসুম শেষ হতেই রাস্তা পূর্বের অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে। বিষয়টি তদন্তের জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গোটা অনিয়মের সাথে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী ও শ্যামনগরে অতিরিক্ত দায়িত্বরত উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জড়িত বলে অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা জানান, ইতিপূর্বে ঐ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রকল্প গায়েবের অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে তিনি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কালিগঞ্জ উপজেলায় এডিপির আওতায় রতনপুর এলাকার দুটি কাজের বিল আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে বিল উত্তোলনের দশ মাস পর একটি ভাঙ্গা ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা জিলান ট্রেডার্সের মালিকের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরানপুর বাজার এলাকার রাস্তার কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে শ্যামনগর) জাকির হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত করে দুইশ মিটার জায়গায় ‘থিকনেস’ ২০ মিলি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঠিকাদার কাজটুকু করে দেবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!