খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
নৌকায় সন্তান প্রসব!

শ্যামনগরে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর গৃহবধূকে ঝুঁকি নিয়ে নেয়া হয় হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

চারিদিকে নদী। টানা বর্ষায় কর্দমাক্ত গ্রামীন রাস্তা। এরকম পরিস্থিতিতে প্রসব যন্ত্রনায় কাতর স্ত্রীকে দোলনায় ঝুলিয়ে কাধে নিয়ে উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে রওনা দিলেন অসহায় স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রতিমধ্যে নৌকায় সন্তান প্রসব করলেন ওই প্রসুতি। শনিবার (৩১ জুলাই) বেলা দেড়টার দিকে শ্যামনগর উপজেলাধীন পাতাখালী ও নওয়াবেকী বাজারের মাঝামঝি এলাকায় খোলপেটুয়া নদীতে সন্তান প্রসবের এই ঘটনা ঘটে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩০ জুলাই) মধ্যরাতে প্রসব যন্ত্রণা ওঠে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ইমরান হোসেনের স্ত্রী কেয়ামনির (২০)। দ্বীপ ইউনিয়ন হওয়ায় ইচ্ছা করলেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব নয়। সেই সাথে মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট কাঁদা পানিতে টইটম্বুর। সচরাচার মোটর সাইকেলই একমাত্র যানবাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই দ্বীপ ইউনিয়নে। কিন্তু কাঁদা পানিতে তাও চলার জো নেই।

ওদিকে, প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সন্তান সম্ভাবা গৃহবধূ কেয়ামনি। পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ধাত্রী দিয়ে স্বাভাবিক ডেলিভারির চেষ্টা করা হয় শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়, তখন উপায়ন্ত না পেয়ে এবং অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় স্বামী-শ্বশুর মিলে দোলনায় ঝুলিয়ে কাঁধে করে কেয়ামনিকে নিয়ে রওনা হন খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালি খেয়াঘাটের দিকে। সঙ্গে ছিল ধাত্রীসহ অন্যান্য স্বজনরা। খেয়াঘাটে পৌঁছে নিজেদের ট্রলারে রওনা হন নওয়াবেকী ঘাটের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে সড়ক পথে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছতে যেতে হবে আরও ১২ কিলোমিটার পথ। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রলারেই ফুটফুটে একটি সন্তান প্রসব করেন কেয়ামনি।

কেয়া মনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, বর্তমানে মা ও নবজাতক দু’জনেই সুস্থ আছে। তারপরও তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।

ইব্রাহিম হোসেন আরো জানান, এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের কয়েক কিলোমিটার হেটে খেয়াঘাটে পৌঁছে কয়েকঘণ্টা নদী পথ পাড়ি দিয়ে স্থলভাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে আরও ১০-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ হওয়ায় নেই ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, মেলে না চিকিৎসা সেবা। মাঝেমধ্যেই নদী পথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ট্রলারে সন্তান জন্ম দেন অনেকে, আবার জীবনহানির ঘটনাও ঘটে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মায়ের। অনেকে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে রক্তক্ষরণেও মারা যায়, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু কেয়া মনি নয়, এ যেন উপকূলের দৈনন্দিন চিত্র, জীবন-মৃত্যুর খেলা। একদিকে, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, অন্যদিকে গ্রামীণ অবকাঠামোর অনুন্নয়ন কিংবা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই উপকূলীয় জনপদের মানুষের।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!