সাতক্ষীরার শ্যামনগরের টেংরাখালী গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত জোড়া খুনের মামলায় আরো চার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৩ জুলাই) বিকালে তিনজনকে নিজ বাড়ি ও একজনকে শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের টেংরাখালী গ্রামের জোহর আলীর ছেলে জিয়াউল হক লিটন, একই গ্রামের নূর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ, আসানুর হক ও মল¬ুর হোসেন।
ঘটনা ও মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বর মোঃ আব্দুল বারী তার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ লাল্টুর কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে জয়ী ও পরাজিত ইউপি সদস্য ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে শুক্রবার সোয়া ৬টার দিকে দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিসে বিশেষ সভা চলাকালে বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টুর নেতৃত্বে আনিছুর রহমান, লাল্টুর ছেলে মোখলেছুর রহমান মিলন, মেহেদী হাসান, কালিঞ্চি ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলু, র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণকারি বনদস্যু টেংরাখালী গ্রামের আব্দুল অলিম, মিকাইল হোসেন, মাদক মামলার আসামী ছাদেক, ভাই আব্দুল কাদের, সোবহানসহ শতাধিক লোক হাতে দা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। প্রায় ঘন্টাব্যাপি চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫/৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে আহতদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স নেয়ার পর চিকিৎসকরা আব্দুল বারীর ভাতিজা টেংরাখালী গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে আমির আলীকে মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় একই গ্রামের সাকাত আলী শেখের ছেলে আব্দুল কাদের শেখ (৩৬) সামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে শনিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পথে মারা যান আব্দুল কাদের।
এ ঘটনায় টেংরাখালী গ্রামের মৃত তফিলউদ্দিন গাজীর ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারি বাদি হয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু, ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলুসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫০ জনকে আসামী করে শনিবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ৯ জুলাই বিকালে র্যাব-৬ এর সদস্যরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে চার জন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় আরো তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। রাতেই চারজনকে শ্যামনগর থানায় পুলিশে সোপার্দ করা হয়। বাকী তিনজনকে আটক করে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন জানিয়ে ১০ জুলাই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বুধবার বিকালে এই মামলার আরো চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মোমরেজ আলী জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে বুধবার বিকাল সোয়া চারটার দিকে জিয়াউল হক লিটনকে তার শশুর বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ও অপর তিন সহোদর আব্দুল হামিদ, আসানুর হক ও মলুর হোসেন কে টেংরাখালী গ্রামে তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বৃহষ্পতিবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।