খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

শ্যামনগরে চুনা খালের উপর নির্মিত সেতু উপকূলীয় দুই গ্রামের সেতু বন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের উপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের যুবদের উদ্যোগ ও বাস্তবায়নে তৈরি হয়েছে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু। আর এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেতু বন্ধন, কষ্ট লাঘব হয়েছে এলাকার হাজার হাজার পথচারীর। উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এলাকার মানুষের। পাল্টে দিয়েছে প্রামীণ জনপদের চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের উপরে নির্মিত সেতুটি সংলগ্নে অবস্থিত ১৮৮ নং পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ৭০ ভাগ শিশু খালের ওপারের গ্রাম গুলো থেকে আসতো। সেতুটি তৈরির আগে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে। এর ফলে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছিল শিশু শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যা। আশংকাজনক ভাবে কমে যাচ্ছিল স্কুলে উপস্থিতির হার। প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী এ পারের মানুষ যেতে পারতো না ওপারে। মসজিদ ও মন্দিরে যেতে না পারায় ব্যহত হতো এলাকার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রার্থনা। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ না থাকায় দু’পারের মানুষের মধ্যে একরকম সামাজিকতাও কমে গিয়েছিল। অসুস্থ কোন ব্যক্তিকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে ঘুরে আসতে হতো প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার পথ। ফলে অকালে প্রাণ হারাতে হতো অনেকের। এছাড়া স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি, মাছ বাজারে পরিবহন করতেও ভোগান্তিতে পড়ে। নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল ওই এলাকার মানুষ।

এলাকার মানুষের পারাপারের সমস্যার কথা ভেবে তা সমাধানে এগিয়ে আগে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যবৃন্দ। তারা মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করা চুনা খালের উপরে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা শুরু করে সেতু নির্মাণের কাজ। নিজেদের শ্রম বৃথা যেতে না দিয়ে চুনা খালের উপর দৃশ্যমান করে তোলে কাঠের একটি সেতু। প্রায় ১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটির দু’পাশে দেয়া হয়েছে রেলিং। এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারছেন। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে চলাফেরা করে কমপক্ষে ৩/৪ হাজার পথচারী। বিদ্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন নির্বিঘেœ যেতে পারছে বিদ্যালয়ে। ফলে ভোগান্তি কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বেড়েছে উপস্থিতির সংখ্যাও।

এছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার প্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে এই সেতু পার হয়ে সহজে বাজারজাত করতে পারছেন। সেতুটি ঘিরে উৎসবের আনন্দ বইছে এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রতিদিন বিকালে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে সেতুটি পরিদর্শনে আসছে শত শত মানুষ। অনেকে সেতুটিতে উঠে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এলাকার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সেতুটি তৈরি হওয়ার মাধ্যমে। চুনা খালের উপর দৃষ্টিনন্দন একটি সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ায় সেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, আগে দুটি বাশের উপর দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। এ সময় অনেক ঝুঁকি থাকায় স্কুলে যেতাম না। এমনকি আমাদের বই-খাতা খালের পানিতে ভিজে যেতো। এখন আমরা এই সেতুর উপর দিয়ে সহজে স্কুলে যাতায়াত করি।

স্থানীয় বসিন্দা আব্দুস সাত্তার তরফদার বলেন, এই সেতুটি নির্মাণের ফলে বেশী সুবিধা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। একই সাথে এর সুফল ভোগ করছে এলাকার কৃষকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের। এখন উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ১৮৮ নং পানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, চুনা খাল পার হওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কমে গিয়েছিল। যা নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। যা নিয়ে আমরা সব সময় টেনশনে থাকতাম। বর্তমানে সেতুটি নির্মাণ হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। বাচ্চারা আনন্দের সাথে বিদ্যালয়ে আসছে।

চুনা হেতালবুনিয়া বাইতুল নুর জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, সেতুটি হওয়ায় এলাকার দু’পারের মুসল্লিরা নির্বিঘেœ মসজিদে যাতায়াত করতে পারছেন। আগে জুম্মার নামাজেও মানুষের উপস্থিতি ছিলো অনেক কম, এখন বেড়েছে। এছাড়া এক পার থেকে অন্য পারে সাইকেল, ভ্যান মোটরসাইকেল পারাপার না করতে পারায় কোন মানুষ অসুস্থ হলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। তিনি বলেন, সেতুর কারণে মানুষের সময় ও শ্রম দুটোই কমেছে। আগে উপজেলা সদরে উঠতে যে সময় লাগতো এখন তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে মানুষ পৌঁছাতে পারছেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আল ইমরান বলেন, একটি ছোট্র উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকার বাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধনে সেতুটি তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে মানুষ নির্বিঘেœ খাল পারাপার হতে পারছে। আগে এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ চুনাখাল পারাপারে ভোগান্তিতে পড়লেও তা এখন শান্তিতে পার হতে পারছে। সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেতুটি বানাতে সক্ষম হয়েছি।

খুলনা গেজেট/ বি এম শহিদুল




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!