খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট
সম্ভব হয়নি বাঁধ সংষ্কার

শ্যামনগরের আরও ছয় গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দী ৩ হাজার পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক,সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে আরও ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নে মোট ১০ গ্রামের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে ৫ শতাধিক চিংড়ি ঘের।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে বুুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে দুর্গাবাটির ভাঙ্গন পয়েন্টের সামনে দিয়ে একটি বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। দুপুরের জোয়ারের আগে এই রিং বাধের কাজ শেষ করতে না পারলে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে পশ্চিম দুর্গাবাটির জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর শুক্রবারও ভাঙ্গনকবলিত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান যেমন বাড়ছে, তেমনি সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছে উপকূলের মানুষ। প্লাবিত এলাকায় ইতিমধ্যে সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানি উঠেছে অনেকের ঘরবাড়িতে। প্লাবিত হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পায়খানা, রান্না ঘরসহ অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি।

বুুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম জানান, দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শুক্রবার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পদে। কিন্তু ভাংগন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় রাতের জোয়ারে ইউনিয়নের আরো ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রাম গুলোর মধ্যে রয়েছে, কলবাড়ি, বিলআটি, বুড়িগোয়ালিনী, আড়পাঙ্গাসিয়া, মাদিয়া, পূর্ব পোড়াকাটলা, ভামিয়া, দাতিনাখালীর, পূর্ব দুর্গাবাটি ও পশ্চিম দুর্গাবাটি। এসব এলাকার পাঁচ শতাধিক চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। বহু কাঁচা ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। এসব এরাকায় নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার ভাঙ্গন পয়েন্টে একটি বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি। শনিবার ভোর থেকে এলাকার জনসাধারণকে সাথে নিয়ে রিং বাঁধের কাজ আবারো শুরু কেরেছি। দুপুরের জোয়ার আসার আগের বাঁধের কাজ শেষ করতে পারলে পানি ঢোকা বন্ধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে। জনগণের জানমাল রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বলে তিনি জানান।

এদিকে, শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকালে ভাঙ্গনকবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ-উজ-জামান সাঈদ, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল ইসলাম, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, খুব শীঘ্রই ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। দুর্যোগ কবলিত মানুষের সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনে দুর্গাবাটিতে রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট চালু করা হবে। এছাড়া পানিবন্দী ৩ হাজার পরিবারকে জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দঁড়ি, বাঁশ ও পেরেক সরবরাহ করা হয়েছে। ৫৫০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে তেজ কটালের তীব্র জোয়ারের কারণে সেটি করা সম্ভব না হলেও দ্রুতই ভাঙ্গন পয়েন্টে এলাকায় পাইলিং এর কাজ শুরু হবে।

প্রসঙ্গতঃ খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫নং পোল্ডারের শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দূর্গাবাটি এলাকায় বেড়িবাঁধের ১৫০-১৬০ ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢুকে প্রথমে ওই ইউনিয়নের চারটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীতে ফের জোয়ার শুরু হলে পশ্চিম পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দূর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, বুড়িগোয়ালিনীর আংশিকসহ আরো কয়েকটি গ্রামে পানি ঢোকে। শুক্রবার দিনভর চেষ্টা কওে ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় শনিবার সকাল পর্যন্ত বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মোট ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!