এবারের ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথমে ব্যাটিং মানেই রান উৎসব। এই বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩০০ এর নিচে কোনো ম্যাচেই করেনি প্রোটিয়ারা বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের সেমিফাইনালেও একই লক্ষ্য ছিল টেম্বা বাভুমার দলের। তাই টস জিতেই ব্যাটিং নিয়েছিলেন বাভুমা। তবে বাভুমার দলের সামনে ছিল ক্ষেপে ওঠা অজি পেস অ্যাটাক যার সামনে এক ডেভিড মিলার ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারল না। শেষ পর্যন্ত মিলারের শতকেই লড়াই করার মতো পুঁজি পেল কখনোই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হতে হলে ওয়ার্নার-হেডদের দরকার ২১৩ রান। এই লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জেই পড়েছিল অসি ব্যাটসম্যানরা। প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে জমিয়ে দেয় দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। অবশ্য চোকারখ্যাত প্রোটিয়াদের শেষ হাসি হাসা হয়নি। ৩ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতে সঙ্গী হলো অসিরা। অতীতে সাতবার ফাইনালে খেলে রেকর্ড পাঁচবার শিরোপা জিতে নেয় অসিরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে অসি ওপেনার টেরভেল ৪৮ বলে ৬২, স্টাভিন স্মিত ৩০, ডেভিট ওয়ানার ২৯ রান করেন। প্রোটিয়া বোলার কইজি ও সামছি দুটি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারের দুই বল আগেই অলআউট হয় প্রোটিয়ারা। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০১ রান আসে ডেভিড মিলারের ব্যাট থেকে। অন্যদিকে অজিদের হয়ে প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক নেন তিনটি করে উইকেট।
মুম্বাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালটি হয়েছিল রান উৎসবের। ভারত এবং নিউজিল্যান্ড- দুই দলই করেছে ৩০০ এর বেশি রান। ৭০০ রানের বেশি ওই ম্যাচে জয় হয়েছে ভারতের। কিন্তু কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পিচে খেলা হচ্ছে তার পুরো উল্টো। এখানে শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, রানের জন্য মাথা কুঁড়ে মরছে ব্যাটাররা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। পুরো টুর্নামেন্টে টস জয় মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান উৎসব। এবারও সেই শঙ্কাই করেছিলেন অনেকে। তবে টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর প্রোটিয়াদের উড়ন্ত সূচনার জায়গায় পড়তে হয়েছে ব্যাটিং বিপর্যয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরু থেকেই চেপে ধরেছে অস্ট্রেলিয়া। একদিকে তারা যেমন উইকেট তুলে নিচ্ছে, অন্যদিকে রানও আটকে রেখেছে। দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে- উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এক প্রকার আটকে রেখেছে কামিন্স-স্টার্করা।
১৪ ওভারের মধ্যে আউট হয়ে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক, টেম্বা বাভুমা, রাসি ফন ডার ডুসেন এবং এইডেন মার্করাম। প্রথম ওভারের শেষ বলেই মিচেল স্টার্ক ফিরিয়ে দেন টেম্বা বাভুমাকে। উইকেটের পেছনে জস ইংলিশের হাতে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ৪ বলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি।
৬ষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন কুইন্টন ডি কক। জস হ্যাজলউডের বলে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন ডি কক। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে আসা ডি কক একেবারে জায়গামত এসে ব্যর্থ হলেন। দলীয় রান ছিল তখন ৮ রান।
দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরে যান এইডেন মার্করাম। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন তিনি। ১০ রান করে তিনি আউট হন হ্যাজলউডের বলে। ২৪ রানের মাথায় আউট হন রাসি ফন ডার ডুসেন। তিনি করেন ৬ রান।
এর পর বেরসিকের মতো হানা দেয় বৃষ্টি। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর প্রোটিয়াদের ইনিংস গড়ার দায়িত্ব কাধে তুলে নেন দুই হার্ড হিটার ব্যাটার ক্লাসেন ও মিলার। দুজনের প্রায় ১০০ রানের জুটিতে ৩০ ওভার শেষে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১১১ রান দাড়ায়।
ক্লাসেন এবং মিলার অজিদের প্রধান অস্ত্র অ্যাডাম জাম্পাকে মাঠের চার পাশে আছড়ে ফেলতে থাকেন। যেভাবে তারা খেলছিল তাতে বাধ্য হয়েই অজি অধিনায়ক কামিন্স বোলিংয়ে নিয়ে আসেন পার্ট টাইম বোলার হেডকে। আর এসেই অজি ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরান হেড। টানা দুই বলে ফেরান বিপদজনক ক্লাসেন ও জানসেনকে।
তবে তখনও ক্রিজে ছিলেন কিলার মিলার। দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পর জেরাল্ড কোয়েটজেকে সঙ্গে নিয়ে আবারও ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোয়েটজে। ৩৯ বলে ১৯ রান করেছেন তিনি।
এক পাশে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল চললেও অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিলার। ১১৪ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন তিনি। অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে আর বেশি দূর যেতে পারেননি। ১১৬ বলে ১০১ রান করে ফিরেছেন তিনি।
শেষ দিকে কেশব মহারাজ-কাগিসো রাবাদারা দ্রুত ফিরলে নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।