খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ কার্তিক, ১৪৩১ | ৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গণ-অভ্যুত্থানের সুফল পেতে রাষ্ট্র সংস্কারে সবার পরামর্শ চেয়েছেন ড. ইউনূস
  এক এগারোর সময় ২৭তম বিসিএসের ১১৩৭ জনকে বাদ দেয়ার মামলা ফের শুনবেন আপিল বিভাগ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৩৯ মামলা, ২০২টিতে হত্যার অভিযোগ

গেজেট ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আজ রোববার পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ২৩৯টি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০২টি হত্যা মামলা। বাকি মামলাগুলোয় হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার মধ্যে ঢাকার আদালত ও থানাগুলোয় হয়েছে ১৯৯টি।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ছাড়া সর্বাধিক মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ১৮৮টি। এরপর সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের (১৫৫টি) বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ১২১টি ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ১০৭টি মামলা হয়েছে।

এর বাইরে সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে ১০২টি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৯৩টি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে ৫৫টি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ৪৮টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে ২২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ২৮টি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি আমলাসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান নারী

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মায়া ইসলাম (৫১) নামের এক নারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১ নভেম্বর খিলগাঁও থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। মামলার বাদী মায়া ইসলামের ছেলে মোস্তফিজুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মায়া ইসলাম পরিবার নিয়ে খিলগাঁওয়ের বনশ্রীতে বসবাস করতেন। ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির সিঁড়িতে বসে ছিলেন। তখন বাসার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার ওপর ২০০ থেকে ২৫০ জন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী হামলা চালান। এ সময় বাড়িতে অবস্থান করা মায়া ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ২০ জুলাই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও আসামি করা হয়েছে।

কিশোরকে গুলি করে হত্যা

আসিফ (১৭) নামের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রাজধানীর মিরপুর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। মামলার বাদী আসিফের পূর্বপরিচিত আমজাদ হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর রাব্বানী হোটেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিল চলছিল। তখন ছাত্র–জনতার মিছিলে হামলা চালান ২০০ থেকে ৩০০ জন। মিছিলে থাকা আসিফের মাথায় গুলি লাগে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আসিফের নিথর দেহ উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। পরে তাঁকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন রাত ১০টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সংসদ সদস্য আতিকুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজম, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও সাবেক ব্যাংকার চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে আসামি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে গুলি করে হত্যা

তাহমিদ আবদুল্লাহ (২১) নামের এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। মামলার বাদী তাহমিদের খালাতো ভাই মো. সোহাগ। তাহমিদ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ছাত্র ছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর গোলচত্বরে ছাত্র–জনতার মিছিল চলছিল। তখন আসামিরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পিস্তল, শর্টগান, চাপাতি, রামদা, রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র–জনতার মিছিলে হামলা চালান। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র তাহমিদ আবদুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১০ আগস্ট দুপুরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!