খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪০৬
  কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী সাবেক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত
  যুবদল নেতা হত্যা মামলায় সুব্রত বাইন ৭ দিনের রিমান্ডে
সংবাদ যখন ‘বিষময়’ বিনোদন!

শুধুই ‘রোমান্টিক’ নিউজ, নেই অনুসন্ধান (পর্ব-২)

নিয়ন মতিয়ুল

দেশে ‘বিনোদন সাংবাদিকতা’ বলে একটা কথা বা ঘটনা রয়েছে কয়েক যুগ ধরে। প্রতিটি পত্রিকা বা অনলাইনে বিশেষ আয়োজনে নিয়মিত প্রকাশিত হয় বিনোদন পাতা বা সংবাদ। অনেক পাঠক তাতে হুমড়িও খেয়ে পড়েন। ধাঁধানো ছবি, ‘বোল্ড’ হেডিং- যেন এলাহী কাণ্ড। তবে এই কাণ্ডের যারা আয়োজক, তারা কি ‘বিনোদনদাতা’, না সত্যিই সাংবাদিক- তা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে তারা যে মূলধারা থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত, উপেক্ষিত, ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মতো’ই গুরুত্বপূর্ণ পাঠক সরবরাহকারী সেটা বোঝা যায়।

পত্রিকার কর্তারা বলেন, অনলাইনের যুগে লোকে সাধারণ খবর আর পড়ে না। তাই পাঠক ধরার রাস্তা এখন ‘বিনোদন’ আর ‘খেলাধুলা’ সংবাদ। কর্তাদের এমন দৃষ্টিভঙ্গিই জানান দেয়, বিনোদন কোনো খবর নয়, বরং পাঠক ধরার ফাঁদ। আর সেই ফাঁদ পাততেই নিয়োজিত করা হয় সংবাদকর্মীদের। কর্তারা আবার ফাঁদ পাতার কৌশলও বাতলে দেন। হিট বাড়ানো ভাইরাল কনটেন্ট তৈরির ‘তুমুল’ তাগাদাও দেন।

আর এমন বাস্তবতায় বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে বিনোদন মানেই হয়ে ওঠে শোবিজের স্ক্যান্ডাল, চটুল রস-উত্তেজনা আর যৌনতার ছোঁয়া। শিল্পীদের মেধা, মনন, গুণ, সৃজনশীলতার পরিবর্তে দৃশ্যমান সৌন্দর্যে মোহাবিষ্ট করার রগরগে গল্প। ক্যামেরার পেছনের শ্রমঘন সৃজনশীল ইতিহাসের বদলে সামনের ধাঁধানো শিল্পীর সুষম সৌন্দর্যই হয়ে ওঠে মুখ্য। সেই সঙ্গে ‘নায়িকারা বাইরে বেরুলে রাস্তায় থুথু ফেলেন কিনা’, ‘ঘুমানোর আগে দাঁত মাজেন না যেসব নায়ক’ এমন অনুসন্ধান বিনোদন সংবাদের তালিকায় স্থান পায়।

অথচ দু’দশক আগেও বিনোদন সংবাদে সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ ছিল সৃজনশীলতার। আর এখন সেখানে ‍উৎকট সৌন্দর্যের সঙ্গে যৌনতার মিশেলে অদ্ভুত ফ্যান্টাসির ছড়াছড়ি। যা বিনোদন সাংবাদিকতাকে করে তুলেছে চটুল, হাস্যকর। যে যুগে ইন্টারনেট খুললেই রসময় গুপ্তদের আদিম সাহিত্যের মহামারি, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পর্ন ইন্ডাস্ট্রির নীল ছোবল, এমনকি স্কুলের নৈর্ব্যাক্তিক প্রশ্নেও মিলছে মিয়া খলিফা, সানি লিয়নদের দেখা, সেখানে গণমাধ্যমের ক্লাসিক বিনোদন এখন আর ‘খায়’ না কেউ। তাই বিনোদনের নামে চলছে খ্যাত আর অখ্যাত শিল্পীদের অসুস্থ যৌনতার বিজ্ঞাপন।

‘কর্তার ইচ্ছায় কর্মের’ খাতিরে বিনোদন সাংবাদিকরা তাই হাতপা বাঁধা অবস্থায় ‘বিষময়’ বিনোদন উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই কর্তা কারা? সাপ্তাহিক সংবাদ পর্যালোচনা সভায় বিনোদন সাংবাদিকরা কি গুরুত্ব পায়? সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাদের? কি নির্দেশনা আসে তার কাছ থেকে? বিনোদন বিটের অনেকের অভিযোগ, স্ক্যান্ডাল বা যৌনতার আবেশ না ছড়ালে পাঠক খায় না, আর পাঠক না খেলে চাকরি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই তারা বিনোদনে বিষ দিয়েই যাচ্ছেন। যে বিষে নীল হওয়া পাঠকরা গুণ বা সৃজনশীলতার পরিবর্তে ‘পরীদের’ সুষম শরীরে খোঁজেন শুধুই যৌনতার উগ্র ঘ্রাণ। যার প্রমাণ মেলে সামাজিক মাধ্যমে।

(লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে)

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!