বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ (বিপিসি) স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষক সমাজের পেশাগত অধিকারের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের কার্যালয়ে এর আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার অঙ্গীকার এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানানো হয়। তবে যতদিন জাতীয়করণ করা সম্ভব হচ্ছে না সেই অন্তর্বর্তী সময়কালে নিম্নবর্ণিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে আহ্বান জানানো হয়েছে-
১। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য ভাতা যেমন- বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।
২। সরকারি কলেজের অনুরূপ পদ্ধিতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করতে হবে।
৩। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ন্যায় আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের ( জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও এন.সি.টি.বি. ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের লিয়েন/ডেপুটেশনে নিয়োগদান করতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ/সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আই.এল.ও-এর সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্যে স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। শিক্ষাঙ্গনে দলা-দলি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি/ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুরূপ নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করতে হবে।
৭। সরকারি কলেজের অনুরূপে বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং বেসরকারি কলেজে ডিগ্রী (অনার্স) ও মাস্টার্স পাঠদানরত শিক্ষকদেরকে এম.পি.ও ভূক্ত করতে হবে।
৮। সরকারি কলেজের অনরূপে বেসরকারি শিক্ষকদেরও পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করতে হবে।
৯। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অপরিকল্পিতভাবে যত্র-তত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করে জরিপের মাধ্যমে কেবল মাত্র চাহিদার ভিত্তিতে ((Need based) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ রেজাউল কবির, অধ্যক্ষ সাহিদুন নাহার, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফ, অধ্যাপক ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, অধ্যক্ষ সালমা শাহাদাত, অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, অধ্যক্ষ জহিরউদ্দিন আজম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডল, অধ্যক্ষ এম. এ মোনায়েম, অধ্যাপক হোসনে জাহান, অধ্যাপক কানিজ সালমা, অধ্যাপক আল মামুন প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এনএম