যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আলোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আল্টিমেটাম শেষ হবার আগেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। বুধবার (২১ আগস্ট) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ভিসি পদত্যাগের দাবিতে চলমান কর্মসূচির মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় ভিসিকে পদত্যাগ করার জন্য তারা ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়।
ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে আন্দোলন করলো, সেটা সর্ম্পকে আমার কিছইু বলার নেই। তাদের বলতে চাই, তারা ক্লাসে ফিরে যাক। তারা জীবন গড়ুক। কারণ যেভাবে তারা আন্দোলন করছে, সেটা তো তাদের কাজ না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক, ভিসির বাসায় গিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগের দাবিতে মিছিল স্লোগান দেওয়া তাদের কাজ না।
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ মিথ্যা। যদি কোনো দুর্নীতি করি, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
জানা যায়, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০ মে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে ভিসি পদের মেয়াদ শেষ করেন।
একই বছরের ১ জুন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান। অভিযোগ উঠেছে, নানা দুর্নীতির মধ্যে তিনি যবিপ্রবির ১৪টি লিফট স্থাপনে ১০ কোটি টাকার অনিয়ম করে আলোচিত হন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগ ও সরকার পতনের পর থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত যবিপ্রবির উপাচার্য পদত্যাগ না করায় গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে।
ওইদিনই যবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শেখ হাসিনার ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিক গ্যালারির সামনের ছবি ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। পরদিন কর্মসূচি থেকে ভিসির বাসা ও প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, যবিপ্রবি উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে, গত সোমবার বিকালে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এছাড়া পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং উপাচার্যের একান্ত সচিব আব্দুর রশিদও।
মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনিছুর রহমান, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. তানভীর ইসলামসহ হলটির সকল সহকারী প্রভোস্ট।
খুলনা গেজেট/এএজে