মানুষের শরীরে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য শিরা ও উপশিরা। এসব শিরা ও উপশিরার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত চলাচল করে। কিন্তু কখনও কি লক্ষ্য করেছেন, শরীরের এসব শিরা, উপশিরাগুলো ত্বকের ভেতর থেকে নীল, সবুজ কিংবা বেগুনি রঙের দেখায়?
আমাদের শরীরে রক্ত লাল হওয়ার পরও শিরা বা উপশিরাগুলো কেন নীল, সবুজ কিংবা বেগুনি রঙের দেখায়? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে? অনেকে আবার এ শিরা বা উপশিরার বাহারি রং দেখে ভয়ও পান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, রক্তে থাকে অক্সিজেন। মানুষ যখন শ্বাস নেয়, তখন রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা অক্সিজেনে পূর্ণ হয়। তখন রক্ত আরও লাল হয়ে ওঠে। শরীরে রক্ত যখন একস্থান হতে অন্য স্থানে শিরা বা উপশিরার মাধ্যমে চলাচল করতে শুরু করে তখন রক্তে অক্সিজেনের সংখ্যা কমতে থাকে। তার মানে এই নয়, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমলে রক্ত লাল দেখায় না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ এর বরাতে জানা যায়, শরীরে নীল, সবুজ বা বেগুনি শিরা-উপশিরা বিষয়ে গবেষণা করেছেন আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর ক্লেবার ফার্ট্রিন। তিনি বলেন, রক্ত শরীরের প্রতিটি টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়ার পর আবার ফুসফুসে ফিরে আসে। তখনও রক্ত লাল রঙেরই থাকে। তবে রক্তের ছায়া পরিবর্তন হয়।
শিরা বা উপশিরায় রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তের বয়ে চলার ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এ কারণে আমরা শরীরের শিরা বা উপশিরাগুলো নীল, সবুজ বা বেগুনি রঙের দেখি। প্রকৃত অর্থে কিন্তু শিরা বা উপশিরাগুলো নীল, সবুজ বা বেগুনি নয়। এগুলো ইলিউশন বা ভ্রান্তি মাত্র।
কি অবাক লাগছে কিংবা চমকে যাচ্ছেন? ভাবছেন, তাহলে চোখে যে নীল, সবুজ বা বেগুনি রঙের শিরা-উপশিরা দেখলেন, তা সবই মিথ্যা! বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যা দিয়েছে।
বিজ্ঞান বলছে, আমরা চোখে দেখি রেটিনার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। আমাদের ত্বকের অনেক স্তর রেটিনার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছড়িয়ে দেয়। আবার নীল, সবুজ বা বেগুনি রংয়ের চেয়ে আলোতে লাল রঙের তরঙ্গ বেশি যা রেটিনায় বিভ্রান্তি ঘটায়। তাই কম রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যই আমাদের রেটিনায় আঘাত করে। আর এ কারণেই আমরা আমাদের শরীরে শিরা বা উপশিরাগুলো নীল, সবুজ বা বেগুনি রঙের দেখে থাকি।
চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরে শিরা বা উপশিরাগুলো নীল, সবুজ বা বেগুনি রঙের দেখলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এগুলো শরীরের স্বাভাবিক অংশ বলেই বিবেচিত।
খুলনা গেজেট/ এএজে