ফেব্রুয়ারি এলে বইপ্রেম তীব্র হয়। আলোচনায় আসে বইমেলা, লেখক, প্রকাশক। পান্ডুলিপি থাকলেও প্রকাশক না পাওয়ায় এবার আমার বই বের হয়নি। শতকরা ৯৫ ভাগ বাংলাদেশি প্রকাশক ঠকবাজ। তারা লেখকের রক্ত শুষতে পারদর্শী। বইমেলাও প্রকাশকবান্ধব। আমার যে বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্য থেকে মাত্র একটি বই থেকে আমি ২০০৮ সালের দিকে ৮০০০ টাকা লেখক সম্মানী পাই। প্রকাশক কত সংখ্যক বই ছেপেছিলেন আমাকে সঠিকভাবে বলেননি। আমার অনুমতি না নিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদের রং পাল্টে ছোটোখাটো ভুল সংশোধন না করে প্রকাশক হুবহু ওই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন। কত সংখ্যক বই ছাপেন তাও আমাকে জানানো হয়নি। এর ২ বছর পর প্রকাশকের অফিসে গিয়ে বইয়ের বিক্রয়াবস্থা জানতে চাইলে বলা হয় মাত্র ৯৯ কপি বই বিক্রি হয়েছে। তারও ২ বছর পর লেখক সম্মানী চাইলে বলা হয় একটিও বই বিক্রি হয়নি। তাহলে বিক্রিত ৯৯ কপি গেল কই! আরেক প্রকাশক আমার ৫-৬টি বই প্রকাশ করেছেন। লেখক সম্মানী পাইনি। যোগাযোগ করেন না। ফোন ধরেন না। বই লিখে নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
প্রকাশকগণ মন্ত্রী, নেতা, বড় সরকারি পদে আসীন ব্যক্তিত্বের লেখা পান্ডুলিপি ছাপতে আগ্রহী। তাতে সরকারি ক্রয়সহ অন্য সুবিধা আছে। বিদেশে বসবাসকারী লেখক হলে ভালো। সেখানে প্রাপ্তিযোগের ব্যাপার থাকে। এরা লেখককে পাত্তা দেন না। রাজনীতির বই এড়িয়ে যান। লেখকের কাছে টাকা চান। অনেক প্রকাশক বলেন, ‘আপনাকে ২০০ কপি বই কিনে নিতে হবে।’ এমন সব ব্যাপার ওপেন সিক্রেট। বইয়ের ৫ সংস্করণ বের হলেও লেখককে বলেন না। প্রকাশনা জগতে চরম বিশৃঙ্খলা। বাংলা একাডেমি সরকারি মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনভাবে লেখক পুরস্কার দিতে পারেন না। লেখককে পদক দিয়ে সে পদক আবার কেড়ে নেবার ঘটনা ঘটে। এ লজ্জার কথা বলতে শরম লাগে। এ কেমন নৈরাজ্য! তবুও আনন্দের জন্য লিখি। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)।
লেখক : সাবেক সভাপতি ও অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। akhtermy@gmail.com
খুলনা গেজেট/এনএম