দেশে সব সময়ই বাগেরহাটের কচুয়ার সুপারীর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ সুপারীকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম কমে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে উৎপাদন কমে গেছে। এক সময়ে এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পরিবারের যে সুপারী উৎপাদন হতো তা দিয়ে পরিবারের অনেক খরচের যোগান হতো। এছাড়া শিশু, তরুণ, যুবকদের সুপারী বিক্রি করে বিনোদন, খেলাধুলা, বনভোজন, নতুন কাপড় সহ নানা আয়োজন করতে দেখা যেতো। এখন দেশে সুপারীর চাহিদা ব্যাপক থাকলেও, বর্তমানে কমে গেছে তার উৎপাদন। ফলে সেই সব আয়োজন আর তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এক সময়ে আশ্বিন মাস থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এ এলাকার মানুষের সাথে যৌথ ভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য কচুয়ায় এসে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলতো।
লোনা পানি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে এবছর উৎপাদন কম হওয়ায় বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সুপারির দাম বেড়েছে। প্রতি কুড়ি (২৩১টি) সুপারি পাঁচশ থেকে সাতশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুয়া উপজেলায় এক হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪হাজার ১১৪ মেট্রিকটন সুপারি উৎপাদিত হয় ।
উপজেলার মূলত দুইটি হাটে বর্তমানে অধিক পরিমাণ সুপারী বেচা বিক্রি হয়ে তাকে। সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার কচুয়ার হাট এবং রবি ও বৃহস্পতিবার বাধালের হাট। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ দুটি বাজারে জমজমাট সুপারির হাট বসে । আকার ভেদে প্রতি কুড়ি সুপারি বিক্রি হয় পাঁচশ থেকে সাতশ টাকায়। প্রায় কোটি টাকার সুপারি কেনা-বেচা হয় এ হাট গুলোতে। রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় কচুয়া উপজেলার সুপারি। এ সুপারি বিভিন্ন জেলায় বাগেরহাটের সুপারি নামে সুনামের সাথে পরিচিতি লাভ করেছে ।
আম্পানের প্রভাবে চাহিদার তুলনাায় উৎপাদন আরো কম হওয়ায় এবার সুপারির দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কৃষকের শঙ্কাও। জলাবদ্ধতা ও মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই উৎপাদন কমছে।
কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সুপারি বিক্রেতা মিরাজুল ইসলাম রাজা বলেন, আম্পানের কারণে সুপারির ফুল পড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে তেম কোন সহযোগিতা পাচ্ছেনা এলাকার মানুষ।
কচুয়া ও বাধালের কয়েকশ শ্রমিক পরিবার এই খাতের উপর নির্র্ভরশীল। সুপারি শ্রমিক প্রণব ও মোতালেব বলেন, ‘আমরা সুপারি বাছাই করে প্রতি কুড়ি সুপারি বস্তা বন্দি করি। এক কুড়ি সুপারি বস্তাবন্দি করলে পাঁচ টাকা পাই। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। ওই দিন আমরা ভোর থেকে রাত ১১টার পর্যন্ত কাজ করি। প্রতি হাটে ১৩ শ থেকে ১৪ শ টাকা আয় হয়। এই টাকায় আমাদের সংসার চলে।
বাধাল বাজার সুপারি ব্যবসায়ী অসিত দাস বলেন, এবার উৎপাদন তুলনামূলক কম হলেও বাজার ভালো।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, কচুয়ায় ১৮ হাজার কৃষক সুপারি চাষে সম্পৃক্ত। ঝড় ও লবণাক্ততার জন্য প্রতি বছর উৎপাদন কমেছে। লবনাক্ততা ঠেকাতে কার্যকর সুইচ গেটের করা হলে লবণাক্ততা কমে যাবে এবং উৎপাদন বেড়ে যাবে।
খুলনা গেজেট/কেএম