খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

লবণাক্ত উপকূলে সমন্বিত সবজি চাষে সফলতা

নিতিশ সানা, কয়রা

মাছ চাষের পাশাপাশি সমন্বিত সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে উপকূলের কৃষকরা। বর্ষাকালে যে সব জমি পতিত থাকতো সে সব জমিতে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। ফসলি জমি ছাড়া ঘেরের বেড়ি, বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাচাতে ঝুলছে শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, উচ্ছে, ঝিঙে, বরবটি, পুঁইশাক, খিরাইসহ নানা রকমের সবজি।

অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় সবজি চাষে ঝুঁকছে লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার কৃষকরা। এসব সবজি বাজারে বিক্রি করে আসছে অতিরিক্ত অর্থ। এতে স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ ব্যাপক বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছ‌রে এ উপ‌জেলার এক হাজার ১০০ হেক্টর জ‌মি‌তে ২১ হাজার ৫৮৭ মে‌ট্রিকটন সব‌জি উৎপাদন হয়। আর ৮৯৫ হেক্টর জ‌মি‌তে ৩১ হাজার ৬৪ মে‌ট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছ‌রে এক হাজার ২৭০ হেক্টর জ‌মি‌তে ২৪ হাজার ২৬৯ মে‌ট্রিক টন সব‌জি উৎপাদন হয়। আর এক হাজার ২০০ হেক্টর জ‌মি‌তে ৪৪ হাজার ৫২৮ মে‌ট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়।

আমাদি ইউনিয়নের নাকশা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৩৫) জানান, জীবিকার তাগিদে একসময় বিভিন্ন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। খুলনার ডুমুরিয়ায় দিনমজুরের কাজ করতে যেয়ে সেখানকার মানুষের মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। বেশ কয়েক মাস ডুমুরিয়ার চাষিদের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়ি ফিরে এসে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ করার পরিকল্পনা করেন। তার নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে জমি খনন করে পুকুর ও পাড় তৈরির অনুমতি কেউ দিতে চাননি। আশাহত হওয়ার একপর্যায়ে অনেক কষ্টে একজনের কাছ থেকে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি সফলতার মুখ দেখেন। তার সফলতা দেখে পর্যায়ক্রমে অনেকেই এ পেশায় সম্পৃক্ত হন।

তিনি বলেন, আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। নিজে কিছু জমিও কিনতে পেরেছি। এবছর পাঁচ বিঘা জমিতে মাছ ও সবজি চাষ করছি। বছরে দেড় লক্ষাধিক টাকার মত খরচ করে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পাওয়া যায়। কৃষি অফিস তাদের পরামর্শ-প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করে।

আব্দুল আজিজ (৭০), ইয়াসিন সানা (৩৪), রাফেজা (৪০)সহ বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন স্বাবলম্বী। প্রতিবছর তাদের সাথে নতুন নতুন কৃষক যুক্ত হচ্ছেন। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। বেশ কিছু চাষির বীজ-সার দিয়েছেন। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।

তারা আরও জানান, ঘেরে মিঠা পানির মাছ গলদা, রুই, গ্লাস কার্প, পাঙ্গাস, সরপুঁটি, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। আর ঘেরের পাড়ে বরবটি, শসা, ধুন্দল, উচ্ছে, বেগুন, করল্লা, ঢেঁড়শ, সিম, লাল শাক, পুঁই শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। আগামীতে তরমুজ চাষ করার স্বপ্ন তাদের।

শুধু আমাদীর নাকশা নয়, এখন লবণাক্ত কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, বাগালী ইউনিয়নের ইসলামপুর, বামিয়া, আমাদী ইউনিয়নের মসজিদকুঁড়, খেওনাসহ কিছু গ্রামে বিচ্ছিন্নভাবে ঘেরের পাড়ে সবজি চাষের চিত্র দেখা যায়।

আমাদী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাঈমুল ইসলাম বলেন, নাকশা ব্লকের একশ’ বিঘা জমিতে বরবটি, শসা, করল্লা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করেছে। আমরা সবসময় কৃষকদের পাশে আছি। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। বীজ-সার দিয়ে সহযোগিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, মাচা পদ্ধতিতে সবজির পাশাপাশি তরমুজ করলে তারা আরও লাভবান হবে। আগামী বছর তরমুজ চাষের জন্য আমরা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ অত্যন্ত লাভজনক। দাম ভালো পাওয়ায় মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে এ এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!