লকডাউন দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত বুধবার দুপুরের মিট দ্য প্রেসে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘…এই লকডাউন নিয়েই আমরা শঙ্কিত। যদিও লকডাউন কোনো সমাধান নয়। এখন লকডাউন দিলে আপনি, আমি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব; ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
‘অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার রাজস্ব পাবে না। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সর্বোপরি দেশ পিছিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন লকডাউন দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। হয়তো সরকারও দেবে না। বিশ্বের কোথাও এখন লকডাউন নেই। তা ছাড়া আমাদের সামনে অনেক দৃষ্টান্ত আছে। যে দেশ যত বেশি লকডাউন দিয়েছে, সে দেশ তত বেশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারত লকডাউনে চরম ক্ষতিগ্রস্ত।
‘বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম ছিল বলেই এখনও অর্থনৈতিকভাবে আমরা সচল রয়েছি। করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে লকডাউনের বিকল্প হিসেবে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার পরানো এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিই কার্যকর সমাধান হতে পারে।’
বিগত দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘একবার লকডাউন দিয়েছেন। তাতেই দেশে ১০ পারসেন্ট শ্রমিকের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তারা আর কাজে ফিরে নাই।
‘এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রপ্তানি অর্ডার আসছে। এই মুহূর্তে লকডাউন দিলে আবারও শ্রমিকের ঘাটতি তৈরি হবে। এতে উৎপাদন সংকটে পড়বে শিল্প কারখানা; হাতছাড়া হবে ওই রপ্তানি আদেশ।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘করোনা হয়তো আমাদের জীবনেরই অংশ হয়ে যাবে। আবার চলেও যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি মানিয়ে নেয়াই শ্রেয়। তা ছাড়া লকডাউন আসলেই আবার প্রণোদনার দাবি উঠবে। সরকার সব খাতে সবাইকে সেই প্রণোদনার আওতায় আনতে পারবে না।
‘সেই সক্ষমতাও সরকারের নেই। আবার যারা প্রণোদনা পাবেন, তাদের মধ্যে বণ্টনেও সমস্যা আছে। তাই লকডাউন দেয়ার বিষয়ে সবকিছু ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করেন।
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠার মধ্যে জনগণের চলাচলে চতুর্থবারের মতো বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। গণপরিবহনে যাত্রী বহন করতে হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া বারণ করা হয়েছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি হয়। এই আদেশ কার্যকর হবে ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে।
এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো দেশে এই ধরনের বিধিনিষেধ জারি হলো। এতে মোট ১১টি বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, যার একটি হলো সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা। সামাজিক-রাজনৈতিক, কোনো জমায়েতই করা যাবে না।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্রথম, ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো লকডাউন দেয়ার সময় দ্বিতীয় দফা, একই বছরের জুলাইয়ে শাটডাউন দেয়ার সময় তৃতীয় দফায় এই ধরনের বিধিনিষেধ দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম