রমজান মাস আসার আগেই কখনও চাল, কখনও তেল-চিনি– এভাবে একের পর এক বাড়ছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে বাড়তি দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ভোগের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। নতুন করে দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ডাল। যদিও আগে থেকে বিভিন্ন ডালের দাম বাড়ার মধ্যেই ছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্র বলছে, এক বছরের ব্যবধানে মসুর ডাল কেজিতে ১০ শতাংশ, মুগ প্রায় ৩৫, অ্যাংকর ডালের দাম সাড়ে তিন শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া একই সময় ছোলার দর কেজিতে বেড়েছে ১১ শতাংশ।
জানা গেছে, রমজান মাস ছাড়া বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে দেশে। তবে রোজায় ছোলার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। শুধু রমজান মাসেই বাড়তি চাহিদা মেটাতে দরকার হয় ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ছোলা। কিছু ব্যবসায়ী এ সুযোগ কাজে লাগান। রোজার দেড়-দুই মাস আগেই তারা অযৌক্তিকভাবে ছোলার দাম বাড়িয়ে দেন। মাসখানেক আগেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। শুক্রবার মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজারে ছোলার কেজি বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়।
ছোলার মতো অ্যাংকর ডালের চাহিদাও বেশি থাকে রমজানে। এক-দেড় মাসের ব্যবধানে এ জাতের ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তবে সারা বছরই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মসুর ডাল। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আমদানি করা বড় দানার মসুর ডাল এখন ১০০ থেকে ১১০ এবং দেশি মসুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য ডালের তুলনায় মুগের বেচাকেনা তুলনামূলক কিছুটা কম। এর পরও গত এক-দেড় মাসে মুগ ডালের দর কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। দেড় মাস আগে মুগ ডালের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে বছরে সব ধরনের ডালের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদন হয় এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বাকিটা আমদানি করতে হয়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে চাষযোগ্য জমির মাত্র ২ দশমিক ৪০ শতাংশ জমিতে ডাল চাষ হয়। অন্য ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা, উন্নত জাত ও বীজের অপর্যাপ্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিযন্ত্রের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে ডালের উৎপাদন কম। ফলে বছর বছর আমদানির পরিমাণ বাড়ছে।
তবে ডালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে একমত নন আমদানিকারক ও সুমন ডাল মিলের স্বত্বাধিকারী নেসার উদ্দিন খান। তাঁর দাবি, আগে কিছুটা বাড়লেও এখন ডালের দাম কমছে।
কিন্তু আমদানি কম। তাছাড়া এখন পাইকারিতেও ডালের বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাসখানেক আগে পাইকারি বাজারে অনেক বেশি দর ছিল ছোলাসহ সব জাতের ডালের। সে জন্য খুচরায় দাম বেড়েছে। এখন পাইকারিতে দাম কমলে খুচরায়ও কমবে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের কেনা ডাল বিক্রি শেষ করার পর নতুন ডাল তুলবেন।’
খুলনা গেজেট/এইচ