ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ আগাম টমেটোর ব্যপক ক্ষতি করে। মাটিবাহিত এ রোগ একবার শুরু হলে সেই ক্ষেতে ৩ থেকে ৪ বছর আর টমেটো জাতীয় ফসল ফলে না। ফলন্ত গাছ ঢলে পড়ে মরে যায়। সেই জন্য অলোক গত দুই বছর টমেটো চাষে মোটা অংকের লোকসান গুনেছেন। কিন্তু টমেটো একটি অর্থকারী ফসল। বসে থাকলে চলবে না। তাইতো সে ব্যক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ থেকে ফসল রক্ষা ও উচ্চ ফলনের আশায় বন্য জাতের বেগুনের (পীত বেগুন) উপর জোড় কলম করে টমেটোর চাষ করেছেন। জোড় কলম টমেটো চাষের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ নির্মূল করে অলোক মন্ডল (২৪) সাফল্য অর্জন করেছেন। এবার তিনি দু’বছরের লোকসান পুষিয়েও লাভবান হবেন। তাঁর এ জোড় কলম চাষ এলাকায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। কারণ গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সর্বত্র ব্যক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ আগাম টমোটোর ব্যাপক ক্ষতি করছে।
সন্তোষপুর ইউনিয়নের নাছিরপুর গ্রামের সন্তান অলোক মন্ডল ২০১৫ খুলনার খালিশপুর থেকে টেক্সটাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রকৌশলী) পাশ করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর তিনি চাকুরীর পিছনে ছোটেননি। বাড়িতে ফিরে বাবার ৩ একরের চিংড়ি ঘেরে মাছ চাষ ও ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ শুরু করে করেন। প্রকৌশলী হয়েও তিনি বর্তমানে একজন সফল চাষি।
অলোক মন্ডল বলেন, চাকুরীর পিছনে ছুটিনি। স্বাধীন ভাবে চাষাবাদ শুরু করি। গত বছর ক্ষেতের ৮০ ভাগ টমেটো গাছ মরে যায়। ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই বসে না থেকে স্থানীয় কৃষি অফিস ও ইউটিউব দেখে জোড় কলম করে টমেটোর চাষে আগ্রহী হই। তাই বগুড়া থেকে বন্য বেগুনের বীজ সংগ্রহ করে এবার ঘেরের পাড়ে জোড় কলমের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার টমেটো গাছের চাষ করেছি। গাছে বুনো বেগুন গাছের মত বেশী শাখা প্রশাখা। ব্যাপক ফুল ও ফল ধরেছে। আশা করি দু’বছরের লোকসান পুষিয়েও লাভবান হব।
সাড়ে চার আনি বিলের টমেটো চাষি কানাই হালদার, সুজন মোল্লা, অধির হালদার ও দীলিপ অধিকারী বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। অলোকের জোড় কলম গাছে কোন ক্ষতি হয়নি। আমরাও আগামী বছর এই পদ্ধতিতে টমোটোর চাষ করব।
সন্তোয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার মন্ডল বলেন, কয়েক বছর ধরে সন্তোয়পুর ইউনিয়নে ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ আগাম টমেটোর ব্যপক ক্ষতি করছে। এবার প্রকৌশলী অলোক মন্ডল বীরেটি বেগুনের সাথে জোড় কলম চাষ করেছেন। তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন এবং লাভবান হবেন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে টমেটো চাষিরা বিশেষ করে ঢলে পড়া রোগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর আমরা চাষিদের তীত বেগুনের সাথে জোড় কলম করে টমেটো চাষে আগ্রহী করেছি। সে চেষ্টায় আমাদের নাছিরপুর গ্রামের অলোক মন্ডল সফল। প্রতিটি গাছে ফলন উপচে পড়ছে। আশা করছি সে প্রচুর লাভবান হবেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই