খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : রায় কবে জানা যাবে আজ

রেখো বিরামহীন

রুমা ব্যানার্জী

আজ সকালটা একটু অন্যভাবে শুরু করব ভাবেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মন বসছে না। গত কাল বেশ কাটলো কিন্তু আজ যেন বাড়িটা গিলে খেতে আসছে । বিগত বেশ ক’মাস ধরে বাড়ির চার দেওয়ালে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে ইস্তক ছোটা ছুটি এই দাও ওই দাও,। সারাক্ষণ শুধু তাড়া আর তাড়া। দু দন্ড বিরাম নেই। বিশ্রামের উপায় নেই। বাড়ির পুরো দ্বায়িত্ব আমার ঘাড়ে ফেলে সবাই কেমন নিশ্চিন্ত।

কত দিন একটু গুন গুনিয়ে গান করি না, বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখি না, রাতে উঠে আকাশ ছুঁই না, হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরি না, সকালের কুয়াশা মাখি না। সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। কার ভালো লাগে বলুন? আগে তবুও পাপাই, আমার নাতি, থেকে থেকে আসত গল্প বলো গল্প বলে। এখন এক সর্বনেশে মোবাইল হয়েছে সেখানেই বুঁদ হয়ে থাকে রাত দিন।

যেদিন শুনলাম বৌমার বান্ধবীর বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করতে ওরা দু এক দিনের জন্য বাইরে যাবে মনটা নেচে উঠেছিল ছুটির আশায়। উফফ কটা দিন শান্তিতে থাকতে পারব!!নির্ঝঞ্ঝাট, নিজের মত করে।

এলো সেই ছুটি, একটা সারাদিন কাটালাম ঘুমিয়ে আর গড়িয়ে গড়িয়ে। কতবার ভাবলাম, বিল্টু পুজো সংখ্যা গুলো কিনেছিল পড়ে ফেলি, কিন্তু কেন জানি না ইচ্ছেই করলো না। অথচ এই বই না পড়ার জন্য কত আক্ষেপ হচ্ছিল বই গুলো আসা ইস্তক। আর এখন পাতা উলটিয়েও দেখলাম না। উঠে নিজের জন্য রান্নাও করলাম না। দুটো মুড়ি ভিজেয়ে গালে দিলাম। বেচারা রান্না ঘরটাও আজ একটু ছুটিতে কাটলো।

বিকেল থেকে একে ওকে ফোন লাগিয়ে খানিক বক বক করে সময় কাটালাম। আজ আমার অফুরন্ত সময়।বিরামহীন বিরাম আমার।

আজ হাতে কতটা সময়!!! অথচ অন্যদিন কোথা থেকে যে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারি না। আজ রাতটাও বড্ড লম্বা। রাতটা এত লম্বা সময় জানা ছিল না তো। কদিন আগেও তো চোখ লাগতে না লাগতেই ভোর হয়ে যেত। চোখে ঘুম এলো না সারাটা রাত, ঘুরে ঘুরে এলো ফেলে আসা দিনের হলদেটে স্মৃতিগুলো । ঘুম আসবেই বা কি করে? সারাদিন ঘুমিয়ে ,গড়িয়ে কাটিয়েছি, কাজ কর্ম কিছু করি নি, স্বাভাবিক ভাবেই ক্লান্ত নই।তবে একটা ভালো হল, বহু বছর পরে রাতের কালো কেটে ভোর হতে দেখলাম। একটু একটু করে ঘুমের দেশ থেকে পৃথিবীকে জেগে উঠতে দেখলাম।কিন্তু কই সেই অনুভূতিগুলো তো ফিরল না। সময়ের নদীর স্রোতে সেগুলো যে কবে ভেসে গেছে বুঝতেই পারিনি।

সারা বাড়ি নিঃস্তব্ধ। এই সেদিনও সারাক্ষণের আওয়াজে ক্লান্ত মনটা একটু চুপ করে থাকতে চাইছিল।অথচ আজ সেই নৈঃশব্দ্যই যেন চারিদিক থেকে আঁকড়ে ধরেছে। সাধে কি রবিঠাকুর বলেছেন… যাহা চাই তাহা পাই না , যাহা পাই তাহা চাই না ॥

বার বার চোখটা মোবাইলের দিকে যাচ্ছে। মনটা বার বার বলছে চেনা অচেনা যে কোন নম্বর ভেসে উঠুক, একটু বেজে উঠুক।রিনরিনে গলায় পাপাই “আম্মা, অম্মা” বলে ডেকে উঠুক। বৌমা পায়ে পায়ে ঘুরে নিজের স্কুলের গল্প গুলো করুক। ছেলে থেকে থেকে চা দাও, কি খাই কি খাই করুক। এটাই এখন আমার পৃথিবী। এতেই আমার শান্তি।

এমন সময় প্রাণে তুফান তুলে ফোনটা বেজে উঠল, খোকার গলা।ধরে প্রাণ এলো। ওরা রওনা দিয়েছে। ঘন্টা তিন লাগবে বাড়ি আসতে। আহ্ কি শান্তি। স্নান সেরে ঠাকুরের পায়ে ফুল দিতে দিতে বলে উঠলাম। ঈশ্বর আমাকে এমন করেই ভরিয়ে রেখো। শান্তিতে রেখো, সকলের মাঝে বিরামহীন রেখো।

হে রাজন্‌,তুমি আমারে
রেখো চিরদিন বিরামবিহীন
তোমার সিংহদুয়ারে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!