ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সারা বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার মানুষকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা সুপেয় পানি সংকট। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরের পর থেকে এ অঞ্চলে মিঠাপানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সংকট নিরসনে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেইন ওয়াটার হারভেস্ট (বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ) প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের এক লাখ মানুষ সুপেয় পানি পাবে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়িত প্রকল্পে উপকূলীয় ছয়টি উপজেলায় তিন হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১৭ হাজার ট্যাংক স্থাপন করা হবে। যার একেকটি ট্যাংক স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০-৪২ হাজার টাকা। গত বছরের মে মাসে প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করেছে।
আশাশুনি উপজেলা সদরের বাসিন্দা রোজিনা খাতুন ও আছিয়া বিবি জানান, তাদের গ্রামে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। টিউবওয়েলের পানিতে অতিমাত্রায় লবণ যা কোনোভাবেই ব্যবহার করা যায় না। বর্ষা মৌসুমে দূরের পুকুর ও জলাশায় থেকে মিঠাপানি সংগ্রহ করতে হয়। আর বছরের বাকি সময় পানি কিনে খেতে হয় তাদের। রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্রকল্পের অধীনে তারা প্রত্যেকে একটি করে তিন হাজার লিটার ট্যাংক পেয়েছেন। তাদের বাড়ির উঠানে ওই ট্যাংক স্থাপন করে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ছাদ বা টিনের চালে স্থাপন করা ট্যাংক থেকে পাইপের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরার জেলার মোট জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি ব্যবহার করতে পারবে। আর পানি সংকটে রয়েছে ৩৭ শতাংশ মানুষ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় আট লাখ।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় মানুষের সুপেয় পানি সংকট নিরসন করতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক অবস্থায় উপকূলীয় জনপদের অন্তত এক লাখ মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মিটবে। আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব সুফলভোগী বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবে। বৃষ্টির পানি শতভাগ নিরাপদ। তাছাড়া অনেকদিন ট্যাংকে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়।
সাতক্ষীরার আইলা দুর্গত গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে সুপেয় পানি। চারদিকে নদ-নদী আর সুন্দরবন বেষ্টিত এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মিঠাপানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। অনেক সময় কয়েক মাইল দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। সরকার গৃহীত রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তাদের এ সংকট কিছুটা কাটবে।
খুলনা গেজেট/এনএম