নগরীর পশ্চিম রূপসার মাছের আড়তের পাশে একটি বাজারে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে যায়। সেই সাথে পুড়ে যায় বাজারের পাশের বস্তির কয়েকটি ঘর। পুড়ে যায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন। খোলা আকাশের নিচে দিন পার করেছ বস্তিবাসী।। মানুষের বারান্দায় ঠাঁই হলেও বিকেলের বৃষ্টি তাদের দুর্ভোগের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পশ্চিম রূপসার ওই বাজারে গেলে ছুটে আসেন গৃহহীন বস্তির কয়েকজন মানুষ। করতে থাকেন সাহায্যের আবেদন। জানাতে থাকেন তাদের নানা অভাব ও অভিযোগের কথা।
ষাট বছর পার করেছেন রুবি বেগম। মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তিনি। ঘরে অসুস্থ্য মাকে রেখে টিকা দিতে গিয়েছিলেন খুলনা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে সংবাদ যায় বাজারে আগুন লেগেছে। টিকা না দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন মাকে রক্ষার জন্য। কিন্তু এর আগে মাকে অনত্র সরিয়ে নিয়ে যায় প্রতিবেশীরা। মানুষের বাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়িতে একখন্ড জমি কিনেছিলেন তিনি। আগুনে জমির দলিল পুড়ে যায় তার। সেই সাথে পুড়ে যায় ঘরের আসববপত্রসহ অন্যান্য জিনিষ। এক কাপড়েই দু’দিন পার করছেন তিনি। ঘরে কিছু টাকা জমানো ছিল সেগুলোও পুড়ে গেছে। কি খাব তা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি।
হুমায়ুন কবীর সুমন, খুলনা বিএল কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাষ্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। বাজারের পাশে সুলতানের বস্তির ভাড়াটিয়া তিনি। তিনি বলেন, বই ছাড়া আমার নিজস্ব সম্পতি বলে আর কিছু ছিলনা। আগুন লাগার সময় তিনি বাইরে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে বই গুলো রক্ষার জন্য ছুটে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবেশীরা তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। জামা কাপড় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতিবেশী এক চাচার একটি লুঙ্গি ও গেজ্ঞি দিয়ে তিনি দিন পার করেছেন। শনিবার খোলা আকাশের নিচে বসে রাত কাটিয়েছেন তিনি। সকালে কোন খাবার জোটেনি। দুপুরে বাজারের একজন ব্যবসায়ী খাবার দিলে সকলে ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।
সাথী আক্তার, মাছের আড়তের পাশে একটি খুপড়ি ঘরে চায়ের ব্যবসা করতেন। টাকা জমিয়েছিলেন অন্য ব্যবসা করার জন্য। ঘরে তার ফ্রিজ, টিভি, আসববপত্রসহ কিছু স্বর্ণালংকার বানিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা আগুন তার সবকিছু কেড়ে নিল। পথের ফকির থেকেই গেলাম। সকলে আসে সাহায্যের বানী নিয়ে কিন্তু কেউ তা করেনা। শনিবার সারারাত এক প্রতিবেশীর বারন্দায় অবস্থান করেছি।
মো: খেলাফত হাওলাদার। ওই বাজারের একজন ব্যবসায়ী। আগুনে পুড়ে তার ব্যবসায়ের তিন লাখ টাকার কাঁচা মাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘটনার সময় তিনি বাগেরহাটে ছিলেন। খবর শুনে দেখেন সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। বস্তির মানুষের দুদর্শার কথা চিন্তা করে তিনি আজ দুপুরে একশ’ জন মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন।
উপস্থিত গৃহহীন মানুষেরা অভিযোগ করে বলেন, আগুন নিভে যাওয়ার পর অনেক নেতারা এখানে আশার বানী নিয়ে এখানে এসেছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশী সময় পার হওয়ার পর কোন সাহায্যে ও সহযোগীতা কারও কাছ থেকে এখনও পাওয়া যায়নি।