খুলনার রূপসা উপজেলার পালেরহাট বাজারে সরকারি তপশীল অফিসের নামে রেকর্ডীয় কয়েক কোটি টাকা মুল্যের শুণ্য দশমিক ২২ শতক সরকারি জমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে জবর দখল করছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। ওইখাস জমিটিতে ডিসিআরপ্রাপ্ত ১৫-২০জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে চিহিৃত ভূমিদস্যু কাজী সামছুর রহমান খোকন ও তার সহযোগিরা। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেছেন পালেরহাট বাজার ব্যবসায়ী দোকান মালিকরা। বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম ইয়াসিন ঢালীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আসাদুর জামান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সরকারি খাস জমিটি খালি করতে ডিসিআরপ্রাপ্ত দোকানদারদের নানাভাবে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে ভূমিদস্যু সামছুর রহমান খোকন ও তার পোষ্য সন্ত্রাসীরা। সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যু কর্তৃক জবর দখলের ফলে একদিকে, রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা মুল্যের সম্পত্তি হারাচ্ছে; অন্যদিকে সারাজীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে পথের ভিখারী হতে চলেছি। ফলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী ও বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
তারা বলেছেন, ২০০৮সালে দোকানঘরগুলো সরিয়ে সরকারি তফশীল অফিসের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে ওই সরকারী খাস সম্পত্তির পিছনে থাকা রেকর্ডীয় মালিক ভূমিদস্যু কাজী সামছুর রহমান খোকন গং সরকার এবং ডিসিআরকৃত দোকানদারদের বিবাদী করে নিম্ন আদালতে বাটোয়ারা মামলা করে (যার নং-৯৯৭/০৮)। ওই মামলায় ডিসিআরকৃত অসহায় দোকানদাররা নিজ খরচে ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় মামলাটিতে ২০১৩ সালে দোকানদার ও তফশীল অফিসের পক্ষে রায় দেয়। রায়ের ১৭ ও ১৮নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে দখলকৃত দোকানদারদের পক্ষে দখল স্বত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই রায়ের সর্বশেষ পাতায় নিম্ন আদালত ওই জায়গার একটি চৌহদ্দি উল্লেখ করে, যেখানে সুস্পষ্টভাবে সরকারি জায়গা এবং ব্যক্তিগত জায়গা আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে ওই ভুমি দস্যু কাজী সামছুর রহমান গং উচ্চআদালতের একটি আপিলের রায় দিয়ে ডিসি মহোদয় বরাবর দরখাস্ত করেন। এরসাথে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয় ভূমিদস্যুরা। সরকারি সম্পত্তি পুনরায় জবর দখলের চেষ্টা করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়াউর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিয়াসুর রহমান ডিসিআরপ্রাপ্ত অসহায় দোকানদারদের উপায় না দেখে ওই সরকারি ভূমি অফিসের সম্পত্তি রক্ষার্থে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন (যার নং- ১৪৪৮৯/২০১৭, ২৩-১০-২০১৭ইং)। উচ্চ আদালত অসহায় ডিসিআরকৃত দখলে থাকা গরীব দোকানদারদের পক্ষে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে একটি রুলজারী করেন। যাহা উচ্চ আদালত থেকে ওইবছরের ৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। তাতেও সরকার পক্ষ জমিটি প্রাপ্ত হয়।
আরও বলা হয়েছে, ওই জায়গাটিতে ১৯৮০ সালে নির্মিত তফশীল অফিসের একতলা ভবন এখনো দাড়িয়ে আছে, সেখানে গত ৪ মাস ধরে অত্যাধুনিক দ্বিতল ভবন নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তরের ৩৬০টি পিলার ভূগর্ভে ঢুকানো হয়েছে, দোকানদারদের ডিসিআর’র অনুমোদনপত্র ও রাজস্ব পরিশোধের রশিদসহ প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, পুলিশ ফাঁড়ির রান্নাঘর, বাথরুম রয়েছে খাস জমিটিতে। ভূমিদস্যু কাজী সামসুর রহমান খোকনের আপন চাচা সামাদ কাজীর বিক্রিত জমির দলিলেও উক্ত সম্পত্তিটি সরকারি বলে উল্লেখ রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসককে দেয়া তখনকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিয়াসুর রহমানের দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করা হয়েছিল। সরকারি জমিটি শ্রীফলতলা এলাকার মৃত শেখ আব্দুল মতলেবের ছেলে শেখ আতিয়ার রহমানের বিআরএস রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় ২০১৭ সালের ১৯ মে জমিটি তার নয় মর্মে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নৈহাটির তৎকালীন নায়েক আবুল বাসার বরাবর জবানবন্দী দেন; তাতে তিনি বলেন- জমিটি তারও নয়, এটি সরকারি সম্পত্তি। বৈধ কাগজপত্রের সাথে এতোগুলো প্রমাণাধি থাকার পরও রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকামুল্যের সম্পত্তি ভূমিদস্যুরা জবর দখলে নিয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি।
অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় কোটি কোটি টাকামুল্যের জমি উদ্ধার এবং মহামারী করোনা সংকটকালে গরীব দোকানদের রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজিসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
খুলনা গেজেট/এআইএন