শুক্রবার সকালে পশ্চিম নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালায় এক তরূণ। গুরুতর আহত রুশদির সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি এখনও কথা বলতে পারছেন না। সম্ভবত তার এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর নিউ ইয়র্কে হামলা হয়েছে। ছুরি নিয়ে হামলাকারী তরুণকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত সালমান রুশদিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক ঘণ্টাব্যাপি সার্জারির পর সালমান রুশদিকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তিনি এখনও কথা বলতে অক্ষম।
তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি জানিয়েছেন, তার অবস্থা ভালো নয়।
এক ইমেইলে ওয়াইলি বলেন, সালমান সম্ভবত এক চোখ হারিয়েছে, তার নার্ভেও আঘাত লেগেছে, তার লিভার ছুরির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সকালে পশ্চিম নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালায় এক তরুণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সে সময় জানিয়েছিলেন, তাকে ২০ সেকেন্ডে ১০-১৫ বার আঘাত করা হয়েছে। তবে সে সময় তারা ঠিক বুঝতে পারেননি যে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, নাকি তাকে ঘুষি মারা হয়েছে।
এপি-র একজন সাংবাদিক সে সময় জানিয়েছিলেন, হামলাকারী রুশদিকে ১০-১৫ বার ঘুষি বা ছুরিকাঘাত করেছে।
হামলার পর রুশদি তৎক্ষণাৎ মেঝেতে পড়ে যান। তখন হামলাকারী শান্ত হয়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেখককে ঘিরে ফেলেন। অনুষ্ঠানে আনুমানিক আড়াই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রুশদিকে মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় এবং তিনি তার রক্তের ওপরই লুটিয়ে পড়েন।’
ঘটনার পরই রিটা ল্যান্ডম্যান নামে একজন সহযোগিতার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন এই বলে যে- তাকে জীবিত মনে হচ্ছে এবং তার সিপিআর প্রয়োজন।
রুশদি ভেন্টিলেশনে, পারছেন না কথা বলতে
নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় হামলা হয় সালমান রুশদির ওপর
ল্যান্ডম্যান বলেন, ‘লোকজন বলাবলি করছিল, তার এখনও নাড়ির স্পন্দন আছে, নাড়ির স্পন্দন আছে..’
হামলাটির মুহূর্তে সামনের সারিতেই বসেছিলেন ওহিওর ক্লিভল্যান্ডের বাসিন্দা রজার ওয়ার্নার। তিনি বলেন, ‘তিনি (রুশদি) রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন। আর মেঝেতে রক্তের স্রোতধারা বইছিল।
‘আমি শুধু তার চোখের চারপাশে রক্ত দেখছিলাম, যা তার গাল বেয়ে নেমে যাচ্ছিল।’
পরে রুশদিকে হেলিকপ্টারে করে কাছের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল টুইটে বলেন, ‘আমরা সালমান (রুশদি) এবং তার প্রিয়জনদের পাশে আছি। তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
হামলায় সাক্ষাৎকার-গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা; যা নিপীড়নের হুমকির মধ্যে থাকা নির্বাসিত লেখকদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন এই লেখক।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস তার রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
পরাবাস্তববাদী ও উত্তর-আধুনিক এই উপন্যাসটি কিছু মুসলিমের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল; যারা এর বিষয়বস্তুকে নিন্দাজনক বলে মনে করেন। ইরান ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে বইটি নিষিদ্ধও করা হয়েছিল।
বইটি প্রকাশের এক বছর পর, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আহ্বান জানান । তার মাথার জন্য ৩০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন খোমেনি।
তারপরও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন রুশদি। এক পর্যায়ে ইরান সরকার সরে আসে খোমেনির ডিক্রি থেকে।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশনার পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ছিলেন উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও।
২০০৭ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন, তখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ইরান ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের একজন মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী বলেছিলেন, এ সম্মান ‘আত্মঘাতী হামলাকে ন্যায্যতা দেয়।’
এসব হুমকির কারণে রুশদির অনেক অনুষ্ঠান বাতিলও হয়েছে।
সবশেষ উপস্থিতি ছিল অলাভজনক একটি সংস্থার আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন বক্তৃতা সিরিজে প্রথমবার।
সংস্থাটির অন-সাইট পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এ ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।