খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল
  সচিবালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত : প্রেস উইং
  কুড়িগ্রামে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা নিহত

রিয়ালের জালে বার্সার এক হালি গোল

স্পোর্টস ডেস্ক

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রতিপক্ষ এগিয়ে গেলে রাতটা নাকি লম্বা হয়। গত বুধবার ইউরোপিয়ান রাতেও সবাই তা দেখেছে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ২-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যাওয়ার পর ৫ গোল করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তারপর মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ডর্টমুন্ডেরই দেশের এক ভদ্রলোক কি না মুদ্রার অপর পিঠও দেখিয়ে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, চাইলে বার্নাব্যুতেও ফুটবল খেলার নামে ছেলেখেলা করা সম্ভব।

প্রথমার্ধে পাতলেন অফসাইডের ফাঁদ। তাতে আটকে কিংবা লটকে জেরবার হলো রিয়ালের আক্রমণভাগ। বিরতি শেষে ম্যাচের ৫৬ মিনিটের পর থেকে রাতটা উল্টো রিয়ালের জন্যই লম্বা হতে শুরু করল! যেন শেষ বাঁশি বাজতে যত দেরি হবে, বিপদ তত বাড়বে! ৫৬ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৮৪ মিনিটের মধ্যে সেটাই ৪-০!

না, এবার আর বার্নাব্যুর সেসব জাদুকরি রাত ফেরাতে পারেনি রিয়াল। বরং জার্মান ‘ওঝা’ হান্সি ফ্লিকের নকশায় সব জাদু-টাদু উবে বশ মেনেছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। কাদের কাছে তা আপনার জানা। বার্সেলোনার সমর্থক হলে এতক্ষণে হেসেও ফেলার কথা। ক্লাসিকোয় ৪-০ গোলের এই জয় বার্সার জন্য যে শুধু জয় নয়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘরে, তাঁদেরই দর্শকদের সামনে নাস্তানাবুদ করার আনন্দও। সোনায় সোহাগা হিসেবে যোগ হতে পারে, ক্লাসিকোর এক অর্ধে প্রতিপক্ষের মাঠে ৬৫ বছর পর ৪ গোল করার গৌরবও। ১৯৫৯ সালের ৭ জুন ক্লাসিকোয় এই বার্সাই করেছিল ৪ গোল, মাঠও এই বার্নাব্যু এবং সেই দ্বিতীয়ার্ধেই।

এবার প্রথমার্ধ গোলশূন্য কাটার পর জোড়া গোল করেন রবার্ট লেভানডফস্কি। তাতে পোলিশ স্ট্রাইকারের খুশি হওয়ার কথা নয়। একটি যে পোস্টে মেরেছেন, আরেকটি ক্রসবারের ওপর দিয়ে। দুটোই সহজ সুযোগ। ৫৪ থেকে ৫৬, এই তিন মিনিটের ঝড়ে লেভার কাছে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল রিয়াল। এরপর ৭৭ মিনিটে লামিনে ইয়ামাল ও ৮৪ মিনিটে অধিনায়ক রাফিনিয়ার গোলে আনন্দের ষোলোকলা যেন পূর্ণ হয় বার্সার। তবে লেভার চেয়ে বেশি মন খারাপ হওয়ার কথা কিলিয়ান এমবাপ্পের। বেচারা!

আজ ক্লাসিকোয় অভিষেকে দুবার বল জালে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ফ্লিকের হাইলাইন ডিফেন্সে পাতা অফসাইডের ফাঁদে একবারও গোল পাননি। এমবাপ্পের হতাশার এখানেই শেষ নয়। ওয়ান-ওয়ানে তাঁর তিনটি শট রুখেও দিয়েছেন বার্সার গোলকিপার ইনাকি পেনা। এর মধ্যে অন্তত দুটি শট থেকে গোল হতেই পারত। পেনার দৃঢ়তার কথায় অবশ্য বার্সার পুরো দলের দৃঢ়তার প্রসঙ্গও চলে আসে।

বার্সার একাদশে ৬ খেলোয়াড় ছিলেন ২২ বছরের কম বয়সী। ক্লাসিকোর সর্বশেষ ১০৮ বছরে যা দেখা যায়নি। এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুসের মতো গতিময় প্রতিপক্ষ থাকতেও হাইলাইন ডিফেন্সে খেলা এবং তারুণ্যে ভরসা রেখে একাদশ সাজানোর মতো সাহস দেখিয়েই জয়টা আসলে তুলে নিয়েছেন বার্সা কোচ ফ্লিক।

দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পরপরই কার্লো আনচেলত্তির রক্ষণও কয়েক মুহূর্তের জন্য হাইলাইন ডিফেন্সে উঠে গিয়েছিল। সেই সুযোগে ৫৪ মিনিটে লেভাকে থ্রু পাস দেন ২১ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মার্ক কাসাদো। রিয়াল গোলকিপার আন্দ্রেই লুনিনকে একা পেয়ে গোল করতে অসুবিধা হয়নি লেভার। মাঝে এক মিনিট পরই বাঁ প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে দুর্দান্ত হেডে আবারও গোল করেন পোলিশ তারকা। এবারও পাসদাতা এক ২১ বছর বয়সী, আলেহান্দ্রো বালদে। ১১ ম্যাচে ১৪ গোল করা লেভা লিগে এবার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতাও। মৌসুমে করলেন ১৭তম গোল।

দ্বিতীয় গোলের প্রায় ৯ মিনিট পর রাফিনিয়ার পাস থেকে লুনিনকে একা পেয়েও বল পোস্টে মারেন লেভা। ঠিক তার এক মিনিট আগেও অফসাইডের কারণে এমবাপ্পের কোনাকুনি শটে করা গোল বাতিল হয়।

তবে ৭৭ মিনিটে লামিনে ইয়ামালের ডান পায়ের শটে স্কোর লাইন পাল্টেছে। ওলট-পালট হয়েছে রেকর্ডবই্ও। রাফিনিয়ার পাস পেয়ে ডান প্রান্ত থেকে গোল করেন বার্সা তারকা। আনসু ফাতির রেকর্ড ভেঙে ক্লাসিকোর ইতিহাসে ১৭ বছর ১০৫ দিন বয়সী ইয়ামাল এখন সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। ৭ মিনিট পরই লব করে ম্যাচের শেষ গোলটি করেন রাফিনিয়া, তবে রিয়ালের বিপক্ষে তাঁর প্রথম।

প্রথমার্ধে ৮বার ফ্লিকের হাইলাইন ডিফেন্সে অফসাইডের ফাঁদে পড়েছে রিয়াল। শুধু এমবাপ্পে একাই হয়েছেন ৬বার অফসাইড, সেটাও ম্যাচের ২০ মিনিটের মধ্যে চারবার। এই চারবারই পরিস্কার গোলের সুযোগ ছিল। ৩১ মিনিটে এই অফসাইডের ফাঁদেই দারুণ ফিনিশিংয়ে তাঁর গোল বাতিল হয়। দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ৮বার বার্সা কোচ ফ্লিকের অফসাইডের ফাঁদে পড়েছেন এমবাপ্পে, যা তাঁর ক্যারিয়ারে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ।

এই হারে লা লিগায় বার্সারই গড়া টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছুঁতে পারল না রিয়াল। সর্বশেষ হার গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর, তারপর টানা ৪২ ম্যাচ অপরাজিত থেকে আর পারল না। পারল না পয়েন্ট টেবিলে বার্সাকে ধরতেও। ১১ ম্যাচে ১০ জয়ে মোট ৩০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফ্লিকের বার্সা। সমান ম্যাচে ৭ জয় ও ৩ ড্রয়ে মোট ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রিয়াল। তৃতীয় ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে পার্থক্য ৩ পয়েন্টের। তবে বার্সার সঙ্গে ৬ পয়েন্টের ব্যবধান আনচেলত্তির ঘুম হারাম করতে যথেষ্ট।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!