খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

রামপাল সরকারি কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রামপাল প্রতিনিধি

বাগেরহাটের রামপাল সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেবেকা সুলতানা সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানাগেছে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ৪ জন সিনিয়র সহকারী অধ্যাপককে পেছনে ফেলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোটিপতি বনে যান ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এভাবে তিনি ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেলে তিনি জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক দ্বীনবন্ধু পালের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

তার সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বীনবন্ধু পাল খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পালের নির্দেশে একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এজন্য ওই কলেজের সহকারি অধ্যাপক শেখ ইসরাফিল হোসেনকে আহ্বায়ক করে এবং প্রভাষক সঞ্জয় কুমার পাল, নিরুপম কুমার পাল ও জীবনদ্যূতি চক্রবর্ত্তীসহ ৪ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ সময়ধরে অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পন্ন করেন।

অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই কলেজ শিক্ষক সাইদুর রহমান বেশ কয়েকটি খাত থেকে ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৪ টাকা আত্মসাৎ করেন। ১ থেকে ২২ নং রশিদ বইয়ের মাধ্যমে আদায় করা হয় ৫১ লাখ ২ হাজার ৮৮২ টাকা। টাকা গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু রশিদ পাওয়া যায়নি যথাক্রমে ক- অংশ- এইচএসসি সাধারণ শাখা থেকে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৫ টাকা, খ-অংশ এইচএসসি (বিএম) শাখা থেকে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ টাকা ও গ-অংশ স্নাতক পাস শাখার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৩ টাকা।

তার সময়কালের মধ্যে কলেজের আয় হয়েছে মোট ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪০ টাকা। ব্যয়ের পরিমাণ মোট ২২ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৬ টাকা। তিনি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৪ টাকার কোন হিসাব দিতে পারেননি যা নিরিক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বাইরেও তিনি ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফায় টিউশন ফি’র প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও অন্যান্য ফি বাবদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোন হদিস মিলছে না।

এছাড়াও হিসাব বহির্ভূতভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

ওই কলেজের দায়িত্বশীল শিক্ষকরা জানান, এই কলেজটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ সুনামের সাথে অন্যান্য অধ্যক্ষরা দায়িত্ব করেন, কিন্তু সাইদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আর্থিক অনিয়ম হওয়ায় সকলে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা দাবি করেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যথাযথ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার স্বাক্ষাত পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত ০১৭২১৭৫৮৪১৭ নং মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ ও খুদে বার্তা পঠিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেবেকা সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি সাইদুর রহমানের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের কলেজে সরকারিভাবে নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে যে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নেবে না। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি।

এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

খুলনা গেজেট/কেএ/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!