বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডাকাতির চেষ্টা ও হামলার ঘটনায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) গভীর রাতে আনসার ব্যাটালিয়ন হাবিলদার মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহার নামীয় ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১১ জনকে শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বাগেরহাট আমলী আদালত-২ এর বিচার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ আসামিদের কারাগারে সোপর্দের আদেশ দেন। এছাড়া ঘটনার দিন গুলিবিদ্ধ আছাবুর গাজী নামের এক আসামি পুলিশ হেফাজতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. মানিক শেখ (৩৫), মো. ফজলু গাজী(৫৫), মো. সলাম শেখ (৩০),মো. মনি গাজী( ৪০), মো. নূর নবী শেখ (১৯), মো. আসাদ মোল্লা(৩৩), মো. আব্দুল্লাহ (৩৩), মো. বায়জিদ (৩৭), মো. রুবেল শেখ (২৬), মো. মানজুর গাজী (২৮), মো. আছাবুর গাজী( ২৯)। এদের সবার বাড়ি রামপাল উপজেলায়। মামলা দায়েরের আগেই সন্দেহভাজন হিসেবে বৃহস্পতিবার দিনে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব আসামিকে আটক করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বুধবার (০৩ এপ্রিল) রাত সোয়া দশটার দিকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডের তিন নাম্বার টাওয়ারের সীমানা প্রাচীর কেটে ৫০-৬০ জন সসস্ত্র ডাকাত দল ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে নিরাপত্তাকর্মীরা চিৎকার দেয়। এসময় অস্ত্রধারীরা নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা করে। এক পর্যায়ে আনসার সদস্যরা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা হয়। এতে নিরাপত্তা সুপারভাইজার আকরাম, প্রহরী মো. শেখ সাইদুল ইসলাম, মিন্টু বৈরাগী, ব্রজেন মন্ডল ও আনসার ব্যা্টালিয়ন হাবিলদার কামাল পাশা গুরুত্বর আহত হন। জীবন বাঁচাতে ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় কামাল পাশা তার নিজ নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্র এসএমজি দিয়ে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তখন অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। এই সময়ে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা ১ হাজার ৫‘শ কেজি লোহা নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ৯০ হাজার টাকা।
আহতদের মধ্যে কামাল পাশা ও মিন্টু বৈরাগী খুলণা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্য তিনজন রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৌমেন দাস বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডাকাতির চেষ্টা, ডাকাতি, হামলা ও মালামাল লুটের ঘটনায় একজন আনসার সদস্য মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় ১১জন আসামিকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।গ্রেপ্তার আরও এক আসামি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডটি মূলত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল অভকাঠামোর বাইরে। কাটাতার দিয়ে ঘেরা এই ইয়ার্ডে লোহার রড, তামার তার, তামার তারের বাক্স, লোহার এ্যাঙ্গেল, স্টিলের পাত, লোহার পাতসহ ব্যবহার যোগ্য ও ব্যবহার অযোগ্য বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু রাখা হয়। মূলত এসব ধাতু লুট করতেই সংঘবদ্ধ চক্রটি ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দু দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই হয়। এরপর জমি অধিগ্রহন করা হয়। জমি অধিগ্রহনের পর ভূমি উন্নয়ন কাজের শুরু থেকেই এই কেন্দ্রে ছোট ছোট চুরির ঘটনা ঘটে আসছে।
খুলনা গেজেট/এএজে