খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

রামপালে হেমন্তের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

মেহেদী হাসান, রামপাল

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট। তেমনি এক ঋতু হেমন্ত। শীতের আমেজ শুরু এই হেমন্তেই। শীতকালীন বিভিন্ন সবজি যেমন আমরা পেয়ে থাকি তেমনি হেমন্তকালে খেজুর গাছের মিষ্টি ঐতিহ্যবাহী রসও পাওয়া যায়।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর গাছের এ রস। শতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি খেজুর রস, সেই সাথে মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে আগের মত তেমন আর খেজুর গাছ না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছে গাছিরা। গাছ থেকে রস সংগ্রহ না করায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মজা দায়ক খেজুর রস খাওয়ার ধুম। তারপরও রামপালের অনেক এলাকায় এখনও অনেক গাছি খেজুর রস সংগ্রহ করেন। যা আগের তুলনায় নামমাত্র বললেই চলে।

শরতের আগমনের সাথে সাথেই রামপালের সোনাকুড় খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রস সংগ্রহকারী আশরাফ গাজী সহ অনেক গাছিরা। অনেক গাছি এখনো রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের পরিচর্যা বা চাচ কাজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।

এক সময় এ পেশার উপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল হলেও খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস সংগ্রহকারী গাছির সংখ্যাও কমেছে। অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভিড়েছেন ভিন্ন পেশায়। তারপরও যারা খেজুর রসের উপর নির্ভরশীল,মূলত তারাই এখন কেউ গাছের পরির্চযা বা কেউ রস সংগ্রহে ব্যস্ত।

খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় খেজুর রসের ঐতিহ্যও দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। কয়েকজন গাছির সাথে কথাবলে জানা যায়, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের উপরিভাগে মাথার অংশকে ভালো করে পরিস্কার করতে হয়। সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি বা হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত মাটির পাত্রে রস সংগ্রহ করা হয়। তবে কালের ভেদে এখন অনেক গাছি সেই মাটির পাত্রের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের জার্কিনও ব্যবহার করছেন। ছোট ও মাঝারিসহ এমনকি বিশাল বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমড়ে মোটা রশির দঁড়ি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের পরিচর্যা ও রস সংগ্রহ করতে হয়।

তারা আরো জানান, প্রতিদিন বিকালে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় মাটির কলসি খেজুর গাছে বাঁধেন রসের জন্য। সকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা। রসের মান ভালো পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন রস সংগ্রহে বিরতি দেন। ফলে রসের স্বাদ আরো বেশি মিষ্টি হয়।

রস সংগ্রহকারীরা কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাট বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রয় করেন। আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রয় করেন। গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সু-স্বাদু এই খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালিও লালী গুড়এর চাহিদাও অনেক।

এ রস থেকেতৈরি গুড় দিয়ে মুখরোচক খাবার, পায়েসসহ হরেক রকমের লোভনীয় পিঠাও তৈরির ধুম পড়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি। বলতে গেলে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই রস। খেজুর রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রামপালের গাছিরা।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!