ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে রামপালের গৌরম্ভা ইউনিয়নের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। মারধর, ঘের দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এখনই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সাধারন মানুষ মনে করেন।
গৌরম্ভা ইউনিয়নের কাপাসডাঙ্গা, কৈগর্দাসকাঠি, বর্ণি ও গৌরম্ভা এলাকা ঘুরে সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনস্তাত্তিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
ওই দুই গ্রপের একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান গাজি গিয়াস উদ্দিন ও অপর গ্রপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম সরদারের পুত্র মোঃ রাজিব সরদার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ওই দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম সরদারের পুত্র মোঃ
রাজিব সরদার।
বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দিন ও তার সমর্থকদের অভিযোগ রাজিব সরদার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তার সমর্থকরা ঘের দখল ও ঘেরের বেড়িবাধ কাটা, মারধর, ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় নির্বাচনের আগে সাধারন মানুষের মধ্যে একটা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগের সুত্র ধরে সরেজমিনে কৈগর্দাসকাঠির চর ঘুরে ওই এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আ. খালেকের কৈগর্দাস কাঠি এলাকায় নিজের জমিতে করা ঘেরের বেড়ি বাধ কেটে অন্য ঘেরের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৈগর্দাসকাঠি এলাকায় আকতার হোসেন ও আকরাম হোসেনের ঘের দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। বিগত সময়ে গৌরম্ভা পুলিশ ফাঁড়ি দখল চেষ্টা, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামাল, জুলহাস গাজী ও আক্তারসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী কৈগর্দাসকাঠি এলাকার প্রায় ৩০/৩৫ টির মতো মৎস্যঘের প্রায় ৫/৬ বছর ধরে দখল করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় চরের বাসিন্দা হানিফ শেখ, আ. হান্নান, উজ্জলসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, জুলহাস, জামাল ও আক্তার এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হান্নান দাবি করেন চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার বাড়ি ঘরে ভেঙ্গে লুটপাট ও ঘের দখল করে তার পরিবারসহ তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ওই সব সন্ত্রাসীরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তামার তার চুরি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে।
গত ২৩ মার্চ বর্ণি হাই স্কুল মোড়ে যুবলীগের কার্যালয়ের সামনে কথা কাটকাটির জের ধরে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মল্লিক সাজ্জাদসহ কয়েকজনকে গালিগালাজ ও মারপিট করতে উদ্যত হলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ঠেকিয়ে দেন। গত ২৫ মার্চ বিকেলে কাপাসডাঙ্গা মাদরাসার সামনে রাস্তার উপর ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপাপ্ত সাধারন সম্পাদক সাহাগীর হোসেনকে মারপীট করা হয়েছে। এ ছাড়া আ. হান্নান ও এনামুল হোসেন নামের দুই আওয়ামী লীগ কর্মিকে মারধর করা হয়েছে। কাপাশডাঙ্গার গেরনখালি এলাকার আ. ছালাম ফকিরকে মারধর করা হয়েছে। জারিয়াত হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলীকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ বলেন, জামাল ও জুলহাসের নেতৃত্বে অন্তত ৩০টির মত চিংড়ি ঘের এতোদিন তারা দখল করে নিয়েছিল। জামাল, জুলহাস পুরো কেগর্দাসকাঠির চরে পাঁচ বছর ধরে মানুষের উপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছে। তার অত্যাচারে দেড় শতাধিক লোক চর ছেড়ে চলে গেছে। ভুমিহীনরা জামালকে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের লোক দাবি করে বলেন, চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দিন সব জেনেও কোন ব্যবস্থা নেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কোন লোক বিগত পাঁচ বছরে কারো কোন ক্ষতি করেনি। রাজিব সরদার নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এক শ্রেনীর লোক অতি উৎসাহী হয়ে ঘের দখল, মারধর, হুমকি দিয়ে পুরো গৌরম্ভা ইউনিয়নে একটা তান্ডব চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রাজিব সরদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার সমর্থকদের বলেছি কোন টু শব্দ করা যাবেনা। কারো মারধর কিংবা কারো কোন ঘের দখল করা যাবে না। যেখানে সমস্যার কথা শুনেছি সেখানে আমি ছুটে গিয়েছি। কারো কোন ক্ষতি হোক তা আমি চাই না। নির্বাচনে আমি জয়লাভ করতে পারলে জনগনের সেবা করতে চাই। আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগই মিথ্যা বানোয়াট। আমার পিতার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিগত সময়ে আমার পিতাকে একটি মহল কোন ঠাসা করে রাখার চেষ্টা করেছে। জামালসহ কিছু ব্যক্তি এতটা বেপরোয়া ছিল যে, তারা ভূমি দখল, লুটপাট, অন্যের মাছের ঘের দখলসহ নানান অপকর্মের সাথে যুক্ত ছিল। আমি আমার পিতা মরহুম সেলিম সরদারের আদর্শ অনুসরন করে জনগনের সেবা করতে চাই।
এ বিষয়ে রামপাল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামসুদ্দিন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, গৌরম্ভা ইউনিয়নে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি রামপাল থানাকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই