খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫৪
  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

রামপালের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু

রামপাল প্রতিনিধি

রামপালে এলডিডিপি প্রকল্পের সদস্যগণ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবীতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) বেলা ১২ টায় প্রেসক্লাব রামপালে উপস্থিত থেকে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বাগেরহাটের প্রাণী সম্পদ দপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ডিডি জয়দেব কুমার সিংহসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাশতলী ইউনিয়নের পিজি গ্রুপের সভাপতি মুহা. মাসুম বিল্লাহ। তিনি জানান, আমরা ভুক্তভোগী খামারিরা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ওই কর্মকর্তাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।

গত সোমবার (২৯ জুলাই) আনিত অভিযোগের তদন্ত করেন খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি তদন্তকালে সুকৌশলে আমাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন এবং আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দিতে বলেন। অভিযোগের বিষয়টি লেখা শুরু করার একটু পরে অভিযুক্ত লিও জোবায়ের হোসেন তাড়া দিয়ে আংশিক লিখিত কাগজ কেড়ে নেন। তাদের তদন্ত কার্যক্রম দেখে আমরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি। কোন নোটিশ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্তদের দিয়ে খবর পাঠান সোমবারে রামপাল প্রাণী সম্পদ অফিসে তদন্ত হবে। আমরা তড়িঘড়ি এসে দেখি জয়দেব শিংহর সমমানের মর্যাদার খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম আমাদের অভিযোগের তদন্ত করছেন। তদন্তের এক পর্যায়ে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন সেখানে যান। অভিযোগের বিষয়ে কিছু না জেনেই উল্টো আমাদের শাসান বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ রামপালে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন কালে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। যা নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রানী সম্পদ দপ্তরের আওতাধীন এলডিডিপি প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। পিজি গ্রুপের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ওই দপ্তরের প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (লিও) জোবায়ের হোসেন, ফিল্ড সুপারভাইজার নাহিদ হোসেন, বাগেরহাট দপ্তরে সাত মাস পূর্বে বদলী হলেও বহালতবিয়তে রামপালে অবস্থান করা অফিস সহকারী অমর কুমার কুন্ডু ও ঘাস চাষ প্রকল্পের মাঠ কর্মী মুক্তা খাতুনদের সহায়তায় ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি জনপ্রতি নতুন পিজি গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রশিক্ষনে ৩০ জন করে মোট ১০ টি পিজি গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে খাবার বাবদ মোট ৯০ হাজার টাকা, নিম্ম মানের মুরগির ঘর নির্মান করে ৬০ টি পরিবারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ছাগলের ঘর নির্মাণে ৩০ টি পরিবারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, গৃহপালিত পশুদের ঘাসের বরাদ্দকৃত অনুদানের টাকা থেকে ১০ জনের কাছ থেকে ৫ শত টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকা, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অফিসের ঔষধ খামারিদের মাঝে বন্টন না করে তা বাইরে বিক্রি করা, প্রশিক্ষনে প্রকৃত খামারিদের নাম না দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে অফিসের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে প্রশিক্ষন করানো, দুপুরের খাবার বাবদ বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ১৫ টি প্রশিক্ষনে ১১ জন সদস্যদের কাছ থেকে মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫ শত টাকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে সর্মমোট ১৫ হাজার ২০০ টাকা, খাবার বাবদ ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ১১ টি পিজি থেকে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাত করেন ওই কর্মকর্তা। এভাবে তিনি ও তার সহকারীরা বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেন। তার এমন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় এলডি ডিপি’র সদস্যদের সদস্য পদ বাতিল করারও হুমকি দেন এই কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. শরিফুল হোসের সাথে তার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয়, সমমানের পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত করতে আইনের কোন ব্যাতায় ঘটে কি না ? জবাবে তিনি জানান, জেলা কর্মকর্তা হলেও তিনি উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা কর্মকর্তা হিসাবে তার অভিযোগের তদন্ত করা যায়।

অভিযুক্ত বাগেরহাটের প্রজনন প্রকল্পের ডিডি জয়দেব কুমার সিংহ বলেন, আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। দায়িত্ব পালনকালে খামারিদের জীবনমান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাছাড়া কাজ করলে ভুল হয়। দু’য়েকজন হয়তো ভুল বুঝে অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগ আদৌ সত্যি নয়। আমি কোন দূর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি করিনি। আমার সাথে জুবায়ের হোসেন, অফিস সহকারী অমর কুমার কুন্ডু, ফিল্ড সুপারভাইজার নাহিদ হোসেন ও মুক্তামনি জড়িত নয়। তারা কোন অনিয়ম করেনি। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে অপেক্ষা করুন তদন্ত শেষে সব জানা যাবে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিজি গ্রুপের সহসভাপতি মোসা. মোনোয়ারা খাতুন, সভাপতি মুহা. আল মামুন, ক্যাশিয়ার নূর ইসলাম শেখ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!