গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ৮ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। গত প্রায় দু’মাস আগে রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এই প্রথম সেখানে একসঙ্গে এতজন সেনা নিহতের ঘটনা ঘটল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তথ্য অনুসারে, শনিবার ভোর ৫টার দিকে রাফার তেল আল-সুলতান এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের একটি সামরিক সাঁজোয়া গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। নিহত ওই আট সেনা ওই গাড়িতে ছিলেন। সাঁজোয়া গাড়িটির কোনো যাত্রী আর বেঁচে নেই বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
ঠিক কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এদিকে হামাস দাবি করেছে, তেল আল সুলতানের যেখানে সাঁজোয়া যানটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সেখানে মাটির নিচে মাইন পাতা ছিল। বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই মাইনের প্রভাবেই।
শুক্র-শনিবারের সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৯ জন ফিলিস্তিনিও।
রাফার সঙ্গে মিসরের সীমান্ত রয়েছে। গত বছর অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর জীবন বাঁচাতে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় এই সীমান্ত শহরে জড়ো হন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এ কারণে গত এপ্রিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন রাফায় অভিযান শুরু করতে চান বলে ঘোষণা দেন, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব তাতে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল।
তবে সেই আপত্তি উপেক্ষা করে রাফায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। কারণ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, এ শহরটিতে হামাসের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। গত শুক্রবার রাতে তেল আল সুলতান এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে যে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তাকে আরও জটিল করতে পারে এই ৮ ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু।
কারণ গাজা অভিযান নিয়ে ইসরায়েলে দ্বিধা-বিভক্তি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন সভার অন্যতম সদস্য এবং সাবেক সেনা অধিনায়ক জেনারেল বেনি গান্টজ। তার অভিযোগ, গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহুর কোনো স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জরিপের ফলাফল যদিও বলছে যে হামাসকে পুরোপুরি অকার্যকর করতে গত আট মাস ধরে যে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী— তার প্রতি দৃঢ় সমর্থন রয়েছে সাধারণ ইসরায়েলিদের। তবে গত কয়েক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহের শনিবার ইসরায়েলের প্রধান শহর তেল আবিবে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের দাবি হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের ফেরত আনতে অনতিবিলম্বে গোষ্ঠীটির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে ইসরায়েলের সরকারকে।
তবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে পরাজিত করেই জিম্মিদের উদ্ধার করতে হবে এবং এই মুহূর্তে এই অভিযান থামানোর কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র : রয়টার্স
খুলনা গেজেট/এনএম