খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : এখনও শেষ হয়নি বিচার

গেজেট ডেস্ক

 

সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাককর্মী নিহত হন ২০১৩ সালের এপ্রিলে। ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ১১ বছরে ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে, ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতাদেশ থাকায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির আরেকটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ হয়নি। এভাবেই ‘রানা প্লাজা ধসের’ ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো বিচারের মুখ দেখেনি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। ওই ঘটনায় সাভার থানার উপপরিদর্শক ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। এখন আসামির সংখ্যা ৩৮ জন, যার মধ্যে ১৫ জন জামিনে এবং বাকিরা পলাতক।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। সবশেষ গত ২১ এপ্রিল আদালতে ৪ জন সাক্ষ্য দেন। আগামী ২৮ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। একই ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন সাভার থানায় আরেকটি মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সাক্ষী করা হয় ১৩৫ জনকে।

২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। কিন্তু ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। সেজন্য একজনেরও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। এদিকে, রানা প্লাজা ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। রানা প্লাজা ধসের পর দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সাভার থানায় ওই মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৫ জুন দুদক ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বাকি ৮ আসামিকে অব্যাহতি দেন আদালত। যদিও এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক এম এম মফিদুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে আটক তিনি। ২০২২ সালে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন সোহেল রানা। আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল জামিন মঞ্জুর বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ হত্যা মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সে পর্যন্ত রানার জামিন স্থগিত থাকবে বলেও আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিমল সমদ্দার  বলেন, মামলাটি ২০১৭ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে এলে কয়েক আসামির ওপর বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ৫ বছর পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা হয়। তাই এখানে কোনো দীর্ঘসূত্রতা নেই। রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে সাক্ষীদের হাজির করে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন করছে। হাইকোর্ট ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মানার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন  বলেন, রানা প্লাজা ধস নিছক দুর্ঘটনা। এখানে রানার কোনো হাত ছিল না। কোনো সাক্ষী সুনির্দিষ্ট করে বলেনি তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাই মনে করি, রানা শতভাগ নির্দোষ ও নিরপরাধ। সঠিক বিচার হলে তিনি খালাস পাবেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!