খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

রাজারহাটে ছাগলের চামড়া ২৫ টাকা, গরু ৫ শ’

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ঈদুল আজহা পরবর্তী যশোরের রাজারহাটের প্রথম চামড়ার হাট। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) হাটে দেশের সর্বকালের সর্বনিম্ন দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। হাটে ছিল না অন্য জেলা থেকে আগত কোন পাইকার। শুধুমাত্র নওয়াপাড়ার একটি চামড়া ফ্যাক্টরীর একজন কর্মকর্তা হাটে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গত ১ আগষ্ট শনিবার দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। এ ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে পদ্মার এপারের সর্ববৃহৎ মোকাম রাজারহাটের চামড়ার হাট। ঈদ পরবর্তী প্রথম এ হাট ছিল মঙ্গলবার। সাধারণত ঈদের পরের হাটটি ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বৃহৎ এ হাটে আসে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুষ্টিয়া নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। তারা এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করে নতুন চামড়া নিয়ে ট্যানারিতে ফিরে যান। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম।

একদিকে করোনা, অপরদিকে বৃষ্টি রাজারহাটের চামড়ার হাটকে ভাসিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে যশোরাঞ্চলে তুমুল বৃষ্টিপাতের জন্য বিভিন্ন উপজেলা এলাকার খুচরো ও পাইকাররা তাদের চামড়া নিয়ে বাজারহাটে আসতে পারেননি। তারপরেও অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে লাভের আশা করে তাদের চামড়া নিয়ে হাটে হাজির হন। কিন্তু তাদের সে আশায় একেবারেই ছাই পড়েছে।

রাজারহাটের ইতিহাসে এত কম দামে আগে কখনো পশুর চামড়া বিক্রি হয়নি। যা সর্বকালের সর্বনিম্ন বলে খুচরো ব্যবসায়ীরা অভিহিত করেছেন। যদিও এদিনের হাটে ঢাকাসহ বাইরের জেলার পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা আসেননি। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই চামড়া কিনেছেন। বাইরের জেলার পাইকাররা এলে এ দাম খানিকটা বৃদ্ধি পেত বলে অনেকে মন্তব্য করেন। তবে এদিন শুধুমাত্র অভয়নগরের আকিজ চামড়া ফ্যাক্টরি এস এফের একজন কর্মকর্তা হাটে আসেন। তবে তিনি বা তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে এদিন কোন চামড়া কেনা হয়নি। তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে চলে গেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানায়, এদিন রাজারহাটে অল্প সংখ্যক চামড়া বিকিকিনি হয়েছে। এরমধ্যে ছাগলের চামড়া প্রায় দুই হাজার পিছ ও গরুর চামড়া আ্ড়াই হাজার পিস। তবে খুচরো ব্যবসায়ীরা এ চামড়ার যে দাম পেয়েছেন, তা নিয়ে তারা চোখের জলে বাড়ি ফিরেছেন। বিপুল পরিমান লোকসানের বোঝা গুনতে হয়েছে তাদের। এদিন হাটে প্রতি পিচ লবনযুক্ত ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হারে ও গরুর চামড়া প্রতি পিচ ৫শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৭শ’ টাকা। যা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

যশোরের মণিরামপুর থেকে চামড়া নিয়ে আসা সন্তোষ হালদার বলেন, তিনি গত প্রায় ১০ বছর যাবৎ চামড়ার ব্যবসা করছেন। কিন্তু এ বছরের মত চামড়ার কম দাম এরআগে কখনো তিনি পাননি। ছাগলের একটি চামড়া তিনি ২৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে তার ১০ টাকার এক কেজি লবন রয়েছে। সে হিসেবে ওই চামড়ার বিক্রি মূল্য হয়েছে ১৫ টাকা। অথচ গত বছর এ চামড়ার মূল্য দ্বিগুন তিনগুন ছিল বলে তিনি জানান। পাইকারদের কাছে তার বকেয়া না থাকলে এদিনই তিনি এ ব্যবসা ছেড়ে দিতেন বলে আক্ষেপ করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় হাটের পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ছাগলের চামড়া তিনি প্রতি পিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় কিনে ৩২ টাকা দরে বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তার সে আশা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজারহাট চামড়া হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ী শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও বৃষ্টির কারণে এ দিনের হাটে ঢাকাসহ বাইরের জেলার পাইকাররা আসেননি। আর ঢাকার পার্টি না আসলে সাধারণত চামড়ার দাম ওঠে না। তাদের কাছে বিপুল পরিমান টাকা রকেয়া রয়েছে। এ টাকা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রদান করলেই চামড়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। যদিও তারা কয়েকজন ব্যবসায়ীকে অল্প কিছু টাকা প্রদান করেছেন। এ টাকাই হাটে লেনদেন হয়েছে। তবে আগামী শনিবারের হাটে চামড়া বিকিকিনি জমে উঠবে। এদিন ঢাকাসহ বাইরের জেলার পাইকাররা হাটে আসবেন বলে তিনি জানান।

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, সরকারের কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে এর বাজার আগামীতে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এছাড়া চামড়ার বাজার মনিটারিং করা হচ্ছে। সেইসাথে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। যাতে এ চামড়া ভারতে পাচার হতে না পারে। এসব কারণে আগামীতে চামড়া ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

খুলনা গেজেট / লিটন / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!