কিছুদিন আগে ইউটিউবে সাইদুল করিম মিন্টুর একটি বক্তৃতা শুনেছিলাম। সেই বক্তৃতায় ফুটে উঠেছিল চরম দাম্ভিকতা। বক্তৃতায় প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ করে অনেক অশ্লীল শব্দও তিনি ব্যবহার করেছিলেন। সেই সাইদুল করিম এখন পুলিশের জালে!
ঝিনাইদহ-৪ (কালিগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় খুন করা হয়েছে। তা-ও প্রায় একমাস হতে চলল। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। মিন্টু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেফতার করে। তাকেও ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে আনোয়ারুল আজীম আনারকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে- পুলিশের কাছে তার স্বীকারোক্তি দিয়েছে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান। এছাড়া ভারতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। মাহমুদ হাসান ভুঁইয়া ওরফে শিমুল ভুইয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন পলাতক। তার আবার এক ডজনের ওপরে নাম। এবার তিনি পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছেন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান নামে। এ নামে তিনি অবশ্য মানুষের কাছে পরিচিত নন। তার পাসপোর্টটিও নতুন এই নামে।
সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান, তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, জিহাদ হাওলাদারের দেওয়া সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা বিভিন্ন টিভি সংবাদে শুনে ও পত্রপত্রিকায় পড়ে শিউরে উঠেছে মানুষ। তারা কতটা নির্মম, কতটা নিষ্ঠুর, কতটা পাষণ্ড হলে একজন মানুষকে হত্যার পর টুকরা টুকরা করতে পারে! আর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রধান ব্যক্তি সৈয়দ আমানুল্লাহ আমানের সঙ্গেই ছিল ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও বাবুর দোস্তি। হত্যাকাণ্ডের পর সংসদ সদস্য আনারের মুখ ও হাত-পা বাধা ছবি খুনি সৈয়দ আমানুল্লাহ পাঠিয়েছে মিন্টু ও বাবুর মোবাইল ফোনে। টিভিতে সে ছবিও দেখেছে মানুষ।
সংবাদপত্রে জানা গেছে, আনারের মেয়ে ডরিন যখন বাবার খোঁজে ব্যস্ত-তখন মিন্টু ও বাবু আনারের মৃত্যু সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত। কিন্তু তাদের চলনে-বলনে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সে-কথা। আনারের মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর মিন্টু ও বাবু কালিগঞ্জে ছুটে গিয়েছেন-আনারের পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দিতে। মলিন মুখে সান্ত¡না দিয়েছেন। জোরালো কণ্ঠে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিও তুলেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি কত বড় অভিনেতা তারা ভাবা যায়!
সাইদুল করিম মিন্টু ও কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুদের মতো নেতাদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারে জনগণ। প্রশ্ন উঠেছে, কারা জনগণের প্রতিনিধি হচ্ছে! আর ওদের নেতা বানিয়েছেন যারা- তারা কী সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন? ওদের কী হয়-দেখার অপেক্ষায় মানুষ।
লেখক : নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক ইত্তেফাক, খুলনা
১৩-০৬-২৪