খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুইজন নিহত
  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ
  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

রাজনীতির পালে হঠাৎ উত্তাপের হাওয়া

গে‌জেট ডেস্ক

নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত। শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে এর সূত্রপাত। যার ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এসময় পুলিশের গাড়ি ও একাধিক যাত্রীবাহী বাসেও আগুন দেওয়া হয়। যার ফলে বহুদিন পর রাজনৈতিক ‘উত্তাপ’ দেখা দিয়েছে রাজধানীতে। শনিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীতে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের এক যুগ্ম কমিশনারসহ ২০ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী। আটক করা হয়েছে দলটির ৯০ নেতাকর্মীকে।

এদিন বিএনপির বড় দুই নেতাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রায় ২ ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আরেক নেতা দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান কর্মসূচি পালনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যায় পুলিশ।

বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে হঠাৎ করেই জানানো হয়- শুক্রবার দেওয়া পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নেতা-কর্মীরা রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে বাধে সংঘর্ষ। একপর্যায়ে মাতুয়াইলে একাধিক যাত্রীবাহী বাস এবং শ্যামলীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের ২০জন এবং বিএনপি’র ৯০ নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছাড়া পান আর অসুস্থ আমানউল্লাহ আমানকে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দল।

দিনভর দুই রাজনৈতিক দল ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা আলোচনায় থাকলেও হঠাৎ বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্রের খাবারের ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপরই পুলিশ-নেতার এই আহার নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনায় মাতেন নেটিজেনরা।

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সকালে, ধোলাইখাল এলাকায়, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বেলা ১১টায় স্লোগানে স্লোগানে ধোলাইখাল মোড়ে অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সরে যেতে বললেও তারা অনড় অবস্থানের কথা জানায়। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। জবাবে ইট-পাটকেল ছোঁড়েন অবস্থানকারীরা। এরপর ধোলাইখাল এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ঘটনাস্থল থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

লালবাগ বিভাগের ডিসি জাফর হোসেন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সমাবেশ করার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপরও বিএনপি কর্মীরা বিভিন্ন গলিতে এসে জড়ো হর রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে আমরা আত্মরক্ষা শুরু করি। এ ঘটনায় আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। একজনের মাথা ফেটেছে। এরপর মাতুয়াইল, উত্তরা, শ্যামলী, যাত্রাবাড়ী,‌ গাবতলী ও নয়াবাজার এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মাতুয়াইলে পুলিশ ও বিএনপিকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর কিছুক্ষণ পর তিন যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে গাবতলী এলাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সকাল ১১টা থেকে কর্মসূচি শুরু হলেও একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ত্রিমুখী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান। পরে পুলিশ তাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এছাড়া রায় সাহেব বাজার এলাকা থেকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ ৮-১০ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

রাজধানীর আরেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে বেলা ১১টার দিকে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দেয় এবং তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে করে বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুরমুখী সড়কে যান চলাচল দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। তবে বিএনপিকর্মীরা বলতে থাকেন, তারা সড়ক অবরোধ করবেন না। সড়কের একপাশে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর শ্যামলীতেও। পুলিশের গাড়িতে আগুন ও একাধিক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে সেখানে। এছাড়া পুলিশের একটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের এসব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও। এভাবে দুপুর পর্যন্ত চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মাতুয়াইলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর দুইটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে দুইটার দিকে হঠাৎ মাতৃসদন হাসপাতালের সামনে স্বদেশ পরিবহনের একটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। সেসময় বাসের ড্রাইভার মো. সানাউল্লাহ বলেন, তিনজন মোটরসাইকেলে করে এসে আমাকে মেরে বাসে আগুন ধরিয়ে চলে যায়। তাদের মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট ছিল না। এসময় পুলিশ পাঁচ-ছয় হাত দূরেই ছিল। এছাড়া রাস্তার দুই পাশেই পুলিশ ছিল।

এর কিছুক্ষণ পর দক্ষিণ মাতুয়াইলের সান্টু ফিলিং স্টেশনের সামনে যাত্রীবাহী আরও একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বেলা দুইটার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে শুক্রবার মহাসমাবেশ করে শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। পাল্টা কর্মসূচিও দেয় আওয়ামী লীগের সহযোগী তিন সংগঠন। পুলিশের পক্ষ জানানো হয়, শনিবার কাউকে কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। এরপর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলেও বিএনপি সকালে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানায়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি, যুগপৎ দলগুলো অবস্থান কর্মসূচি করার কথা জানান।

বিএনপি আজ ছয়টি বাস ও পুলিশের গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, নবীনগর বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না, সেখানেও তারা বাসে আগুন ধরিয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, সব জায়গা থেকে বিএনপি নেতারা অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।

সর্বশেষ রাজধানীতে বিএনপি নৈরাজ্য ও অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে সারাদেশে  রোববার (৩১ জুলাই)  সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। শনিবার (২৯ জুলাই) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের জরুরি সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অপরদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৩১ জুলাই (সোমবার) সারাদেশের সব মহানগরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল রোববার (৩০ জুলাই) কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু জানতে পেরেছি- আগামীকাল আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মতো একইদিনে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সংঘাত চায় না আমরা। যার কারণে ৩১ জুলাই কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!