খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

রাজধানীর স্বামীবাগে পাঁচ টুকরো লাশ : পরিবার জানতো তারা স্বামী-স্ত্রী

মোস্তাক আহাম্মেদ, হরিণাকুণ্ডু

রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগে খুন হওয়া সজিব হাসানের প্রেমিকা শাহনাজকে সজিবের স্ত্রী হিসেবেই জানত তার পরিবারের লোকজন। ছেলের চেয়ে বউমার বয়স অন্তত ১১ বছর বেশি হলেও ছেলের সুখের জন্য এই অসম বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন বলে জানান সজিবের মা সূর্য্য নেছা। প্রায় ১১ বছর আগে শাহনাজের সঙ্গে ছেলে সজিবের বিয়ে হয়েছে বলে জানেন তিনি। মাঝে এই বিয়ে নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে বিয়ের কাগজপত্রও শাহনাজ তাদের দেখিয়েছে বলেও জানান সূর্য্য নেছা। সজিব হাসান ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দি গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।

সজিবের মা সূর্য্য নেছা বলেন, ১৪ বছর ধরে তার ছেলে ঢাকায় খালুর বাসায় থাকে। প্রায় ১১ বছর আগে সে শাহনাজকে নিয়ে বাড়িতে আসে। তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। এতদিন তাদের কাছে শাহনাজ নিজের নাম সাদিয়া ইসলাম মৌ বলে জানিয়েছিল। এ নামেই প্রায় ১১ বছর ধরে তারা তাকে চিনতেন। প্রতিবছর দুই ঈদসহ অন্তত তিনবার শাহনাজকে নিয়ে সজিব বাড়িতে বেড়াতে আসত। তাদের সব আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও তারা অনেকবার বেড়াতে গেছে। প্রায়ই শাহনাজ ফোনে কথা বলত তার সঙ্গে। তাকে মা বলে ডাকত। তারা দু’জন বিদেশে চলে যাবে বলেও শাহনাজ তাকে জানিয়েছিল। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকেও শাহনাজ তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল, সজিবকে নিয়ে সে বিদেশে চলে যাচ্ছে। ১৩/০২/২০২১ (শনিবার) রাত ৮টায় তাদের ফ্লাইট বলেও শাহনাজ তাকে জানিয়েছিল বলে জানান সূর্য্য নেছা। এদিন শাহনাজকে বাড়ির পানির লাইন নষ্ট হয়ে গেছে জানালে সে তাকে বিকাশে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল। যাকে তিনি নিজের মেয়ের মতো জানতেন, সেই ছেলের বউ মৌ ওরফে শাহনাজ তার ছেলেকে এভাবে খুন করবে তা কখনও ভাবতে পারেননি বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সূর্য্য নেছা। তিনি বলেন, সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে সজিব ও শাহনাজ বাড়িতে এসেছিল। তখন চার দিন তারা ছিল। ছেলের বউ সরকারি কোনো গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করে বলে তাদের জানিয়েছিল।

সজিবের ভাই পিয়াস বলেন, আমি তাকে (শাহনাজ) ভাবি হিসেবে খুব সম্মান করতাম। তিনিও আমাকে খুব ভালো জানতেন। আমার লেখাপড়ার খরচও দিতেন। মাঝে-মধ্যে ঢাকা থেকে আমার জন্য বই কিনে কুরিয়ারে পাঠাতেন। পিয়াস আক্ষেপ করে বলেন, মিডিয়াতে আমার ভাইকে নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। এমনকি আমার ভাইয়ের নাকি বাড়িতে আরও একটি স্ত্রী আছে বলে মৌ ভাবি (শাহনাজ) মিডিয়াকে জানিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার ভাই তাকে ছাড়া আর কোনো বিয়ে করেননি। গ্রামে তার কোনো স্ত্রী বা সন্তান নেই।

সজিবের খালা নাজনিন আক্তার বলেন, শাহনাজ তাদের গ্রামের বাড়ি যশোর বলে তাদের জানিয়েছিল। তারা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করে বলে তারা জানতেন। শাহনাজ ও সজিব তাদের গাজীপুরের বাইপাসের বাসায় প্রায়ই আসা-যাওয়া করত।

এদিকে, গ্রামের মানুষও সজিবকে শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের ছেলে হিসেবেই জানে। গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে সজিবের নামে কোনো বদনামও পাওয়া যায়নি। ওই গ্রামের স্কুুলশিক্ষক টিপু সুলতান বারী বলেন, সজিব অত্যন্ত শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির ছেলে হিসেবে গ্রামের মানুষের কাছে খুব প্রিয় ছিল। ছোটবেলা থেকেই সে ঢাকায় থাকত। ১০-১১ বছর আগে এই শাহনাজকে বিয়ে করে গ্রামে আসা-যাওয়া করে। শাহনাজ তার কাছে নিজেকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করে বলে একাধিকবার জানিয়েছে বলেও জানান এই স্কুলশিক্ষক। সজিবকে নিয়ে শাহনাজের নানা মিথ্যাচারের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/কেএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!