রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুমন শেখ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার বলছে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আজিমুল হক বলেন, ‘থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, উনি থানা হাজতের ভেতরে গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে মারা গেছেন।’
এদিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক এ তথ্য জানান।
তারা হলেন, হাতিরঝিল থানার এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল শেখ জাকারিয়া।
সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা জানান, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে পুলিশ তাকে থানায় আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনের সময় সুমনের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণকান্দি।
জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীরে ওরা থানার ভেতর মেরে ফেলছে। অফিসে ওরে মারছে। রাতে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসছে। পুলিশও মারতে মারতে আনছে। রাতে আমি থানায় দেখতে আসছিলাম, আমারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দিছে।’
পুলিশ হেফাজতে সুমনের মৃত্যু নিয়ে হাতিরঝিল থানার সামনে জান্নাতসহ স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। এর ফলে বিকেল পাঁচটা থেকে হাতিরঝিল থানার সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ কয়েক দফায় বিক্ষুব্ধদের সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মী পরিচয়ে বেশ কয়েকজন যুবক বিক্ষোভকারীদের থানার সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। শনিবার বিকেলে সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল মর্গে নেয়া হয়েছে।
সুমনের আত্মীয় সোহেল আহমেদ জানান, শনিবার থানা থেকে তাদের জানানো হয়, সুমন আত্মহত্যা করেছেন। তারা থানায় আসার পর ওসি আবদুর রশিদ তাদের হাজতখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, রুমন হাজতখানায় শুয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে উঠে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছেন, কেউ জেগে আছেন কি-না। এরপর নিজের পরনের ট্রাউজার খুলে পাশের দেয়ালের ওপরে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় বেঁধে ঝুলে পড়েন।
সোহেল বলেন, রুমন অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে তার শাস্তি হোক, নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু থানা হাজতে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ডিউটিতে ছিলেন, কী করেছেন তারা। তাদের দায়িত্বে অবহেলায় সুমন আত্মহননের সুযোগ পেয়েছেন। পুলিশ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই/এমএম