ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে নিহত হয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে বিধ্বস্ত হলে আরোহীরা সবাই মারা যান। আমেরিকায় তৈরি হেলিকপ্টারটি ছিল প্রায় ৫০ বছর আগের। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বহরে ছিল মোট তিনটি হেলিকপ্টার। বাকি দু’টি হেলিকপ্টার নিরাপদে ফিরে এলেও কেবল প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
ঘন কুয়াশা ও দুর্গম এলাকার কারণে উদ্ধারকারী দলের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই প্রায় ঘন্টা দশেক সময় লেগে যায়। এ সময়ে ইরানি কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা-কবলিত হেলিকপ্টারের দু’জন আরোহীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলে ভুল তথ্যও পরিবেশন করে। তুরস্ক, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুর্ঘটনাস্থল সনাক্তকরণে ইরানকে সহায়তা করে।
দুর্ঘটনার আগে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সীমান্তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা দু’দেশের বন্ধুত্ব দারুণ জোরালো বলে ঘোষণা দেন। আজার নদীর পানিপ্রবাহ-ভিত্তিক দুটি যৌথ জলবিদ্যুৎ কমপ্লেক্স-এর কমিশনিংও করা হয়।
ইরানের সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই সুখকর নয়। পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরাইলের ঘনিষ্ট মিত্র মুসলিম দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের যুগান্তকারী সম্পর্ক স্থাপক এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে ফেরার পথেই রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন।
দুর্ঘটনার পর ইরানের অনেক আগেই ইসরাইল প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করে এবং এ ঘটনায় তাদের কোনও হাত নেই বলে জানায়।
ইসলামের শিয়া মতবাদীদের ধর্মরাষ্ট্র ইরানের শীর্ষ ইমাম আয়াতুল্লাহ্ আলি খামেনির ভবিষ্যৎ স্থলাভিষিক্ত হিসেবে রাইসি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন। তিনি কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের কঠোর হাতে দমনের ব্যাপারে সমালোচিত ছিলেন। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর স্যাংশন আরোপ করে। তার সময়ে ইরানে অর্থনৈতিক মন্দা ও বিক্ষোভ তীব্র হয়। তিনি সউদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈরিতার অবসান ঘটান। সিরিয়ায় ইরানি কন্সুলেটে ইসরাইলি হামলা ও হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে তার আমলেই ইরান ইসরাইলে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়।
এই ধরণের পরিস্থিতিতে দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষনেতা প্রেসিডেন্ট রাইসির নিহত হবার ঘটনাক্রম পর্যালোচনা করলে মহাপরাক্রমশালী পারস্য সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ইরানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা ও শৈথিল্য প্রকটভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়।
রাইসির নিহত হবার ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, অন্তর্ঘাত নাকি শত্রুরাষ্ট্রের পরিকল্পিত আঘাত তা এখনো ইরান নিশ্চিত করেনি। ইরান ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দেশ ভারতের একজন গোয়েন্দা, যিনি হেলিকপ্টারে ওঠার আগে প্রেসিডেন্ট রাইসির কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছিলেন, সন্দেহ তালিকার সেই ব্যক্তিকেও ইরানি নিরাপত্তা সংস্থা খুঁজছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য প্রচারিত হয়েছে, যদিও এর সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রহস্য উন্মোচিত হতে হয়তো সময় লাগবে এবং তারপর বুঝা যাবে পরিস্থিতি কতোটা গুরুতর দিকে মোড় নেবে। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট/এনএম