খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

রমজানে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, যা জানা জরুরি

লাইফ স্টাইল ডেস্ক

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে ২৪ মার্চ শুরু হতে পারে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে অনেকেই গোগ্রাসে গিলতে থাকেন একের পর এক খাবার। এসবের বেশির ভাগই তৈলাক্ত কিংবা অস্বাস্থ্যকর। এগুলো খাওয়ার ফলে একদিকে যেমন রোজার সংযম নষ্ট হয়, তেমনই বড় ক্ষতি হয় শরীরের।

ইফতারে কোন ধরনের খাবার বর্জন এবং কোনগুলো গ্রহণ করা উচিত, তা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপন বিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।

ভাজাপোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা

ইফতারের কথা মনে হলে আমাদের মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। আহ, কী চমৎকার প্লেটভর্তি খাবার! মুড়ি, চানাচুর, ছোলা, ভাজা, বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি। অল দিজ আর ডেড ফুড (এর সবগুলোই মৃত খাবার)। অল দিজ আর নট ফুড (এগুলো আদতে কোনো খাবারই নয়)। এসব মৃত খাবার, তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আপনি ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা স্টোমাককে খাবার থেকে বিরত রেখেছেন। সে নিজেকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে, নিজেকে তৈরি করছে, যেন সে সারা বছর আপনাকে ভালো সার্ভিস দেয়। ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা অভুক্ত থেকে আপনি এ রকম অবৈজ্ঞানিক এবং চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার দিলেন। তাকে এই রকম ভাজা পোড়া খাবার; তাকে দিলেন এই রকম হালিম। স্টোমাকের আপনি বারোটা বাজায়া দিলেন।

আপনার পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম হলো না। পরিপাকতন্ত্র রমজানের পূর্বেও যে রকম ছিল, রমজানের মধ্যেও একই অবস্থায় থাকবে। ফলে সে আপনার জন্য কোনো সার্ভিস দিতে পারবে না। অতএব রমজানে হালিম, ফাস্ট ফুড এই জাতীয় খাবার থেকে আপনি বিরত থাকুন।

ইফতার উৎসব নয়

আর কী করবেন? ইফতার উৎসবে মত্ত হবেন না। রমজানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। আপনি যদি ইফতার পার্টিতে আনলিমিটেড ইফতার খান, এইটুকু বলে দিতে পারি যে, রমজানের মধ্যেই আপনি আগে থেকে অসুস্থ হবেন, এমনকি আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে, স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। ওজন আরও বাড়বে। এসব তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত খাবারে প্রচুর ক্যালোরি থাকে।

যা খাবেন

তাহলে আমরা ইফতারে কী খাব? ভেরি সিম্পল। রোজা রাখার কারণে ১২/১৪/১৬ ঘণ্টা আপনার স্টোমাক রেস্টে থাকে। খুবই সফট, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার খেয়ে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) রোজা ভাঙতেন। সেটি হলো খেজুর।

দুই থেকে তিনটা খেজুর নিন এবং এক থেকে দুই গ্লাস পানি নিন। পান করুন। ব্যস, ফাইন। ফার্স্ট ক্লাস একটা ইফতার হয়ে গেল। এটিই হচ্ছে ইফতার। খেজুর আপনাকে পূর্ণ এনার্জি সাপ্লাই দেবে। কীভাবে?

খেজুরের মূল উপাদান হচ্ছে সুক্রোজ। এই খেজুর ভালো করে চিবাবেন, সময় নিয়ে চিবাবেন। চিবিয়ে গিলে নেবেন। স্টোমাকে গিয়ে এই খেজুর থেকে সুক্রোজ ভেঙে তৈরি হবে গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ। ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে এই গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ রক্তে প্রবেশ করবে। এর ফলে আপনার যে ব্লাড সুগার কমে গিয়েছিল, আপনার সেই ব্লাড সুগারকে রিপেয়ার করে ফেলবে; মুহূর্তের মধ্যে আপনি চাঙা হয়ে যাবেন; যে চাঙা হওয়ার জন্য আপনারা গুড়ের শরবত, চিনির শরবত, এই শরবত, ওই শরবত খেতেন। কোনো শরবত খাওয়ার প্রয়োজন নাই।

দুই থেকে তিনটি খেজুর। সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নামাজে চলে যান। এরপর নামাজ থেকে ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন।

রাতের খাবারে কী থাকতে পারে

রাতের খাবারে কী থাকতে পারে? আমরা সারা বছর দুপুরে যে খাবার খাই, সেটাই হবে রমজানে আপনার রাতের খাবার। কী রকম? একটা বড় প্লেট নেন। ভাত নেবেন এক কাপ। এনাফ।

এক কাপের বেশি ভাত নেবেন না এবং অবশ্যই নিতে হবে লাল চালের ভাত। সাথে পর্যাপ্ত সবজি, ভর্তা, শাক, সালাদ, ডাল, এক টুকরো মাছ অথবা মুরগি হলে এক টুকরো মুরগি। গরু এবং খাসি পুরো রমজানজুড়ে আপনি অ্যাভয়েড করুন।

আর কী করবেন? এর সাথে কয়েক রকম ফল রাখুন। একটা ডিম খেতে পারেন। একটু ভেজানো ছোলা আদা দিয়ে খেয়ে ফেলেন। কিছু টকদই খেতে পারেন, কিছু বাদাম খেতে পারেন, কিছু বীজ খেতে পারেন। অল্প অল্প করে খেতে পারেন। ব্যস।

আমরা বলতে পারি এইভাবে যদি আমরা ইফতার করি ৩০টা রমজানে, ৩০ দিন পর আপনার বাড়তি ওজন কমে যাবে। আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আপনি অনেকগুলো ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন। আপনার ব্রেনের আয়ু বেড়ে যাবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!