খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

রমজানের শুরুতেই বেড়েছে মসলাসহ নিত্যপণ্যের দাম, বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

রমজানের শুরুতেই সাতক্ষীরার বাজারে বেড়েছে খিরাই, কাঁচা মরিচ, ডিম, আলু ও বিভিন্ন ধরনের মসলা জাতীয় পণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খিরাই কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আলু ১০ টাকা, প্রকারভেদে বিভিন্ন মসলা কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা ও প্রতি পিচ ডিমে ৫০-৮০ পয়সা পর্যন্ত বেড়েছে। রোজা শুরুর আগেই হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন।

রোজা শুরুর একদিন আগে সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারিতে খিরাই বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। যা মাত্র তিন আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা কেজি। পাইকারিতে ২০ টাকা কেজির আলু বিক্রি হচ্ছে ২৯-৩০ টাকা, ৪৫ টাকা দরের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মাঝারি সাইজের একপিচ লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০/১২ টাকায়। একই সাথে দাম বেড়েছে বরবটি, পেঁপে, ঢেড়স, পটল, সজিনা ও লাউসহ অন্যান্য সবজির দাম। এসব সবজি খুচরা বাজারে প্রকারভেদে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম ৫০-৮০ পয়সা পর্যন্ত বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। এছাড়া জেলার উৎপাদিত ডিমের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাইরে। এ কারণেও দাম বেড়েছে বলে জানান পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজারের কয়েকটি ডিমের আড়ত ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় এমনিতেই বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার। এর মধ্যে রমজানের আগেই ডিমের দাম বাড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে তাদের।

সুলতানপুর বড় বাজারের মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজে ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি সাড়ে ১০ টাকা, সাদা ডিম সাড়ে ৯ ও দেশী মুরগির ডিম প্রতিটি ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ এক সপ্তাহে আগেও এ প্রতিষ্ঠানের লাল ডিম ৯ টাকা ২০ পয়সা, সাদা ডিম ৮ টাকা ৫০ ও দেশী মুরগির ডিম প্রতিটি ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ডিমের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে রাজধানীর বাজারে। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহকমে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে ডিমের।

শহরের কুখরালী এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বাবু জানান, রমজানের আগেই ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিপাকে পড়েছে। যাদের মাছ মাংস কেনার সামর্থ্য নেই তারা অন্তত ডিম বা সবজি দিয়ে সংসারের চাহিদা মেটায়। কিন্তু রমজান শুরুর আগেই হঠাৎ ডিমসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যা নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারকে আরো চাপে ফেলে দিয়েছে।

অপরদিকে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে বিভিন্ন মসলার দাম কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি জেলার পাইকারি মসলা বাজারে এলাচ, লবঙ্গ ও দারুচিনির দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিনিময় হার বাড়ার পাশাপাশি অপ্রতুল আমদানির কারণে মসলার দাম বেড়েছে। বাজারের কয়েকটি মসলার দোকান ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা মসলা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিনিয়া স্টোরে সোমবার মার্কিন ছোট এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ভারতীয় ছোট এলাচ ২ হাজার ৪০০ টাকা, লবঙ্গ প্রতি কেজি ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি। যদিও দুই সপ্তাহ আগেও একই প্রতিষ্ঠানে মার্কিন ছোট এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা, ভারতীয় ছোট এলাচ ২ হাজার ২০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২০০ টাকা ও দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে। তবে কেজিতে ২০০ টাকা কমেছে জিরার দাম।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ফখরুল হোসেন জানান, পাইকারিতে দাম বাড়ার পাশাপাশি সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো জাতের এলাচ ও লবঙ্গ মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। এছাড়া প্রতিবেশী ভারত থেকেও পণ্যটি আমদানি হয়। তবে সম্প্রতি সব ধরনের মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে।

ভোমরা বন্দরের মসলাজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাফসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু হাসান বলেন, এ বন্দরে কোনো মসলা আমদানির অনুমোদন নেই। দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়েই মূলত ভারত থেকে মসলা আমদানি হয়ে থাকে। ফলে সাতক্ষীরায় পণ্যটির দাম একটু চড়া থাকে। জিরার পাশাপাশি ভোমরা বন্দর দিয়ে অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি করতে পারলে সরকারের যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে। এতে সাতক্ষীরায় দামও কমে আসবে।

জেলা শহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, সব ধরনের মসলার দাম অস্বাভাবিক। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের পক্ষে রান্নাতে মসলা ব্যবহার মুশকিল হয়ে পড়েছে। একটি পরিবারের জন্য ন্যূনতম ৫০০ টাকার কমে মসলা কেনার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা সাপ্তাহিক বাজারে যাই, তাদের মাসে অন্তত ২ হাজার টাকার মসলা কিনতে ব্যয় হয়। এছাড়া অন্য মসলাজাত পণ্যও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, রোববার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে মাসিক কৃষি বিপণন ও আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় রমজান উপলক্ষে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিমসহ অন্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ মসলা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিনিময় হার বাড়ার কারণে এসব উচ্চ মূল্যের মসলার দাম সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী যাতে অতিরিক্ত মুনাফা না করে, সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!