চট্টগ্রাম বন্দরে রমজানের পণ্য নিয়ে নোঙর করছে একের পর এক জাহাজ। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বোঝাই ১১টি জাহাজ আছে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে। পথে আছে আরও তিনটি জাহাজ। আগামী চার দিনের মধ্যে নোঙর করার কথা রয়েছে এসব জাহাজের।
ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে এবার আগেভাগে তৎপর হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে হয়েছে জরুরি বৈঠক। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের তৎপরতা শুরু করেছে আগেভাগে। রমজানের বহুল ব্যবহৃত পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে এখন বাকিতেও পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে। কেউ চাইলে ন্যূনতম পেমেন্ট দিয়েও আনতে পারছেন রমজানের পণ্য। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ এই সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
এসব উদ্যোগের পরও অবশ্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি ভোগ্যপণ্যের বাজার। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। ন্যূনতম মার্জিনে এলসি খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যবসায়ীরাও দিচ্ছেন মুনাফালোভীর পরিচয়। চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে এবার আগেভাগেই উত্তপ্ত হয়েছে বাজার। পর্যাপ্ত পণ্য মজুত থাকার পরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, ছোলা, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য।
এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে এবার আগেভাগে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের এলসি খুলতে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্য আগাম নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পরও ডলার নিয়ে কিছু ব্যাংক নিজস্ব নীতিতে চলছে। এটি আরও নিবিড়ভাবে মনিটর করা উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাহলে আমদানি পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘রমজানকে ঘিরে পর্যাপ্ত পণ্য এসেছে দেশে। এখনও প্রায় এক মাস বাকি আছে। ভোগ্যপণ্য বোঝাই বেশ কিছু জাহাজ আছে বন্দরে। পাইপলাইনে আছে আরও এক ডজনের বেশি জাহাজ। আশা করছি, এবারের রমজানে নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাজার।’
পর্যাপ্ত মজুত খাতুনগঞ্জে
রমজানের আগে সর্বশেষ ৯০ দিনের আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রচুর পণ্য এসেছে দেশে। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯০ দিনে ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টন। পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২ হাজার টন। অ্যাঙ্কর ডাল ১ লাখ ৮০ হাজার ও মসুর ডাল এসেছে ১ লাখ ২২ হাজার টন। রমজান সামনে রেখে অপরিশোধিত চিনি এসেছে সাড়ে ৪ লাখ টন। একই সময় খেজুর এসেছে ২৭ হাজার টন। অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ২ লাখ ৮০ হাজার ও পাম অয়েল এসেছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন।
একের পর এক জাহাজ আসছে বন্দরে
ভোগ্যপণ্য বোঝাই একের পর এক জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ৭ ফেব্রুয়ারি চিনি তৈরির ৫৮ হাজার ৯০০ টন কাঁচামাল নিয়ে বন্দরে নোঙর করেছে এমভি কনকার নামের জাহাজ। ২৯ হাজার ৯০০ টন ক্রুড সয়াবিন নিয়ে ৩০ জানুয়ারি এসেছে একটি জাহাজ। গম ও ডাল নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি এসেছে এমভি মালাক। ১০ হাজার টন সয়াবিন নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি এসেছে এমভি ফ্যালকন ম্যাজিস্ট্রেক। এ ছাড়া প্রায় ৪ লাখ টন গমবোঝাই আরও সাতটি জাহাজ নোঙর করে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
এ ছাড়া আগামীকালের মধ্যে ৬০ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন নিয়ে বন্দরে নোঙর করার কথা এমভি বাল্ক কেস্টর নামে জাহাজের। সাড়ে ৬০ হাজার টন চিনি তৈরির কাঁচামাল নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আসার কথা এমভি ফেডারেল কুডসের। ৫৮ হাজার টন গম নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি নোঙর করার কথা আরেকটি জাহাজের।