খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

রপ্তানী স্বাভাবিক না হলেও চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ চলছে পুরোদমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানী স্বাভাবিক না হলেও খুলনা অঞ্চলের ডিপোগুলোতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ চলছে পুরোদমে। এতে হিমায়িত মৎস্যখাতটি আবারও হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কায় রপ্তানীকারকরা। মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালিত হলেও, প্রায় সময়েই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূল অপরাধীরা।

সর্বশেষ, গত ৫ অক্টোবর বিকেলে রূপসার বাগমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেলি পুশকৃত ৫৬০ কেজি চিংড়ি জব্দ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দেবাশীষ বসাক। জেলি পুশকৃত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করার অপরাধে রূপসার জুয়েল ফিস, রাজু ফিস, জনতা ফিস ও হুমায়ুন ফিসকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। এসময়ে রূপসার বাগমারা গ্রামের মৃত আনোয়ার মোল্যার ছেলে মোঃ শাহাজাহান (৩০), রূপসার জয়পুর গ্রামের মৃত কাওসার শেখের ছেলে মোঃ মিজান শেখ(২৮) ও বাগমারার মোঃ নূর হাসানের ছেলে মোঃ সোহান শেখ(৩০) কে ১৫দিনের কারাদন্ড দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় চিংড়িতে সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ পুশ করছে। এরমধ্যে জেলি, সাগু, পাউডার ও সাদা লোহা জাতীয় দ্রব্য গলদা চিংড়িতে বেশি পুশ করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ওজন বাড়াতে চিংড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এতে চিংড়ির গুণগত মান ও রপ্তানী যোগ্যতা হারায়। একই সাথে পুশকৃত অপদ্রব্য মানব দেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিংড়ি ব্যবসায়ী জানান, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা বাজারের প্রায় দুই শত মাছ ঘর থেকে প্রতি মাসে পুলিশ ও মৎস্য অফিসে টাকা দিতে হয়। তা না হলে বিভিন্ন অযুহাতে আড়ৎ বন্ধের হুমকি দেয়। রাস্তায় মাছের গাড়ি আটকে দেয়া হয়। এ টাকা উঠাতে মাঝে-মধ্যে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হয়। এছাড়া খুলনা মহানগরীর নতুন বাজারে ছোট-বড় অন্তত ২৮০টি ও পূর্ব রূপসায় ১৮০টি চিংড়ি ডিপো রয়েছে। এসব ডিপোগুলোতে নিয়মিত অপদ্রব্য পুশ হয়ে থাকে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে খুলনার এসব ডিপো মালিকরা এসো তৃণমূল পর্যায়ের খুচরা ব্যবসায়ীদের (ফঁড়িয়া) দোষারোপ করেন।

রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির একাধিক নেতা জানান, বিভিন্ন চিংড়ি ডিপো ও চাতাল মালিক চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য অপদ্রব্য পুশ করে। অভিযান চালালে তখন মৎস্য ব্যবসায়ী পুশ করা চিংড়ি চট্টগ্রাম, কূলের চর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ফেনিসহ বিভিন্ন স্থানে পিকআপ ও ট্রাকে নিয়ে ওইসব এলাকার মৎস্য ডিপো ও মাছ কোম্পানিতে বিক্রি করে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে এসব চিংড়ি খুলনার বাইরে বিক্রি করতে না পারে এ ব্যাপারে মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে পুশ বন্ধ হবে; এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা এম ফয়সাল হক জানান, কোস্টগার্ড মৎস্য সম্পদ রক্ষায় জিরোটলারে›স নীতি অবল¤¦ন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

খুলনা সিভিল সার্জন মোঃ সুজাত আহমেদ বলেন, চিংড়িতে মেশানো অপদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। পুশ চিংড়ি খেলে লিভার, কিডনি ড্যামেজসহ নানান রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।

খুলনা ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্ট লিমিটেডের সাবেক পরিচালক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, কৃত্রিম পদার্থ মিশ্রিত চিংড়ির প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানব দেহের জন্য তখন ভয়াবহ ক্ষতিকর বিষে পরিণত হয় পুশকৃত চিংড়ি। এভাবে পুশ চলতে থাকায় রপ্তানী বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

 

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!