খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ২
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

রক্তাক্ত মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর দুই মাসের মধ্যে মিয়ানমারে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন দেখল সারা বিশ্ব। শনিবার (২৭ মার্চ) ছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস। আর এই দিনেই দেশজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

এ ঘটনায় নতুন করে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যান চুগ বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে অপমানিত করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দূত সেনাবাহিনীর এই কর্মকাণ্ডকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন জানায়, তারা থাই সীমান্তের কাছে সেনাবাহিনীর একটি নিরাপত্তা চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। তবে সেখানে সংঘাতে জাতিগত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর এক সদস্যেরও প্রাণ গেছে।

শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাজধানী নেইপিদোতে কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, ‘দেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সামরিক বাহিনী। অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে অং সান সু চির মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিদিনই বিক্ষোভ করে আসছেন সাধারণ মানুষ। শনিবারও তারা ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ অন্য শহরগুলোতে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করে নিরাপত্তা বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নারী-শিশুসহ হত্যা করা হয় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।

বার্মিজ গণমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশজুড়ে ১১৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ বছরের এক মেয়ে শিশুসহ কেবল মান্দালয় শহরেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন। দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৭ জন।

নিহতের এই সংখ্যা মিয়ানমারের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও রয়টার্স ও আলজাজিরা’র মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তা খতিয়ে দেখতে পারেনি। অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ডা. সাসা এক অনলাইন ফোরামে বলেছেন, ‌‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজ লজ্জা দিবস। তারা তিন শতাধিক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পর আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করছে।’

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, আগের মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, আপনাদের মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই হুমকির মাধ্যমে আসলে নিরাপত্তাবাহিনীকে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মিনগিয়ান শহরের বাসিন্দা থু ইয়া জ্য বলেন, তারা আমাদের পাখি অথবা মুরগীর মতো হত্যা করছে। এমনকি আমাদের বাড়িতে ঢুকে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

থু ইয়া বলেন, তারপরও আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো… জান্তার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়ে যাবো।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!