বুটিক ব্যবসায়ী সজীব হাসানের সঙ্গে শাহনাজ পারভীন ছাড়াও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল। চার দিন আগে শাহনাজ যখন সজীবের বাসায় ওঠেন, তখন তাঁর গয়নাগাটি বিক্রি করে টাকা দিতে চাপ দিচ্ছিলেন সজীব। শাহনাজকে বাসায় একা রেখে তালা লাগিয়ে সজীব বাইরে যেতেন। এসব পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই সজীবকে ছুরি মেরে হত্যার পর লাশ কেটে পাঁচ টুকরা করেন শাহনাজ।
শাহনাজ আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, আজ বিকেলে আদালত শাহনাজের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওয়ারী বিভাগের পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সজীবের এক খালু শাহনাজ পারভীনকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। শাহনাজকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর ওয়ারীর কে এম দাস রোডের ভাড়া বাসা থেকে বুটিক ব্যবসায়ী সজীব হাসানের (৩৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকেই শাহনাজকে (৫০) আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, তিন দিন ধরে শাহনাজ নিখোঁজ ছিলেন। তিনিই স্বামীকে ফোন করে নিজের অবস্থান জানান। পরে শাহনাজের স্বামী পুলিশের সহায়তা নিয়ে ওই বাসায় যান।
পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ বলেন, শাহনাজ আদালতকে বলেছেন তাঁর (শাহনাজ) সঙ্গে সজীবের পাঁচ বছর আগে সম্পর্ক হয়। তখন তাঁকে (শাহনাজকে) স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ১৭/১ কে এম দাস লেনের চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নেন সজীব। শাহনাজের বাসা পাশের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে (আর কে মিশন)। তখন থেকে সজীবের বাসায় নিয়মিত যেতেন তিনি। শাহনাজের স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাঁর দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন।
শাহনাজ আদালতকে বলেন, পাঁচ দিন শাহনাজকে তাঁর স্বামী বুটিকস শেখার কাজ বন্ধ করে বাসায় সময় দিতে বলেন। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে শাহনাজের কথা-কাটাকাটি হয়। তখন শাহনাজ স্বামীকে হুমকি দিয়ে বলেন তাঁর সঙ্গে (স্বামী) আর থাকবেন না তিনি।
পরদিনই কাউকে কিছু না বলে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় স্বর্ণালংকার ও গয়নাগাটি নিয়ে সজীবের বাসায় ওঠেন শাহনাজ। বাসায় ওঠার পর শাহনাজ জানতে পারেন তিনি ছাড়াও সজীবের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে। সজীব আগেও তাঁর কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছেন। এখন আবার সজীব গয়নাগাটি বিক্রি করে শাহনাজকে টাকা দিতে বলেন। এসব নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সজীবের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সজীব তাঁকে লাঠিপেটা করেন এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় শাহনাজ সজীবের কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে তাঁকে (সজীব) আঘাত করেন। এতে সজীব মারা যান।
খুলনা গেজেট/ টি আই