যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে দূর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশী গবেষক শেখ আবির হোসেনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা আঞ্জুয়ারা বেগম। ছেলের শোকে তার আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
উন্নয়ন কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান , নিহত আবিরের মা আঞ্জুয়ারা বেগম ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের বাধা দেয়ায় ছেলেকে জীবন দিতে হয়েছে। শেষবারের মতো একবার ছেলের মুখটা দেখতে চান তিনি। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে শেখ আবির হোসেন নিহত হন।
নিহত শেখ আবির হোসেন (৩৮) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যান। পড়াশুনার পাশাপাশি টেক্সাসের বুমন্ট শহরের ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে আবির কাজ করতেন। আবির পরিবারের ৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট।
নিহতের ভাই শেখ জাকির হোসেন জানান, এক বছর আগে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় তার ভাই আবির। স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করতো। যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার ছয় মাস পরে তার স্ত্রী সানজিদা আলম ও শিশু কন্যা আরশিয়াকে সেখানে নিয়ে যান। গবেষণা কাজের পাশাপাশি টেক্সাসের স্থানীয় ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে খন্ডকালীন কাজ করতেন আবির।
আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার নিউইয়র্কে দুই বছরের শিশুকন্যা আরশিয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। আবির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দুই মাসের মধ্যে তার বাবা আজিজুল হাকিম মারা যান। যে দেশে নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই, অথচ সে দেশ অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলায়’ উল্লেখ করে আবিরের ভাই শেখ জাকির হোসেন তার ভাই হত্যার বিচার চান আমেরিকা সরকারের কাছে। একই সাথে তিনি তার ভাইয়ের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনারও দাবি জানান সরকারের কাছে।
কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে দূর্বৃত্তদের গুলিতে আবির নিহত হওয়ায় তার পরিবার ও স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকল নিয়ম কানুন শেষে তার মরদেহ দেশে পাঠানো হবে বলে তিনি জেনেছেন বলে আরো জানান।
উল্লেখ্য : যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ২০১৪ সালে আবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।
খুলনা গেজেট/ টিএ