তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা একমত নই, বরং অনেকক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলার একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম আয়োজিত ‘মাহে রমজান ও গণমাধ্যম’ শিরোনামে আলোচনা ও ইফতারের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি আমি দেখেছি। আমরা এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নই। আমরা মনে করি, এ রিপোর্টের তথ্য-উপাত্ত নির্দিষ্ট কিছু সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেই সূত্রগুলো একপেশে ও অনেক ভুল তথ্য সরবরাহ করায় প্রতিবেদনটি এমন হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে অনেকক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো, সব ক্ষেত্রে না হলেও। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ান্তামো বে’তে যেভাবে মানুষকে নির্যাতন করা হয়, সে ধরনের কোনো কারাগার আমাদের দেশে নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের দেশে কখনো এ ধরনের হত্যাকাণ্ড হয়নি। মার্কিন পার্লামেন্টে যেভাবে হামলা করে চার জনকে হত্যা করা হয়েছে, স্পিকারের চেয়ারে দুষ্কৃতকারী বসে ছিল, এমন কোনো ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেনি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত দশ বছরের পরিসংখ্যানমতে, যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা ৩০ শতাংশ হলেও পুলিশের গুলিতে নিহতদের অধিকাংশই এই সংখ্যালঘুরা। এসব কারণে অনেকক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো।’
মার্কিন এই প্রতিবেদন আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি জানিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘দেশে বিচার বিভাগ অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করে। সে কারণেই সরকারের বিরুদ্ধে রায় হয় ও সরকারি দলের এমপিরা জেলে যায়।’
একইসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। মানবাধিকার রিপোর্টে যে নিরাপত্তা বাহিনীর কথা আছে, সেই নিরাপত্তা বাহিনীও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা পাচ্ছে। এ কারিগরি সহায়তাসহ অন্যান্য বিষয়ে সহায়তার মাধ্যমে আমাদের যদি কোনো ত্রুটিও থেকে থাকে, তা ভবিষ্যতে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে চলতি বছর দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে।’ করোনা পরবর্তীতে যে আমাদের অর্থনীতি সুদৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটিও বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা রাত-বিরাতে সমালোচনা করেন, আমি আশা করবো তারা এই রিপোর্টের পর বিরূপ সমালোচনা বন্ধ করবেন।’
বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।