খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

যারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী!

গে‌জেট ডেস্ক

পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর নবম দফায় প্রথম দিনে আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সোয়া ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে আদালতের কার্যক্রম। এ সময় আসামিরা কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। তবে আসামিরা সবাই সিনহা হত্যার সঙ্গে জড়িত নয় এবং নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

আদালতে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী জানান, মেজর সিনহা হত্যার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার সময় প্রদীপ দাবি করেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন।

আদালতকে প্রদীপ কুমার দাশ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তিনি টেকনাফে মাদক নির্মূলে ভূমিকা রেখেছিলেন, সফলও হয়েছিলেন। সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বরং পরিকল্পিতভাবেই তাকে (প্রদীপ) সিনহা হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এই হত্যার দায় তিনি নেবেন না।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রদীপের কাছে জানতে চান, সাক্ষীদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, মসজিদের ইমামরাও ছিলেন, তারাও ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন কিনা? তখন প্রদীপ কিছুক্ষণ চুপ ছিলেন। তারপর বলেন, ইয়াবা সিন্ডিকেট মিলে তাকে সিনহা হত্যা মামলার আসামি বানিয়েছে। তিনি এই হত্যার দায় নিতে রাজি না।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার ১৫ জন আসামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৪ জন আসামির সাফাই সাক্ষ্য আজ শেষ হয়েছে। সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না দাবি করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের (আসামিদের) সিনহা হত্যা মামলার জড়িত করা হয়েছে। এর দায় থেকে তারা অব্যাহতি চেয়েছেন। এর আগে অষ্টম দফায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার আসামি নন্দদুলাল রক্ষিতের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে। নবম দফায় আদালতের কার্যক্রম চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

আইনজীবীরা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাফাই সাক্ষ্য দিতে আসেন সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ৬৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উল্লেখ ছিল, ওসি প্রদীপের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে খুন হন সিনহা মো. রাশেদ খান।

কিন্তু সাফাই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পরিদর্শক লিয়াকত আলী আদালতকে বলেন, সিনহাকে তিনি (লিয়াকত) গুলি করেননি। হত্যাকাণ্ডের অপরাধেও তিনি যুক্ত নন। হত্যার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে তিনি যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, আদালতে তা–ও অস্বীকার করে লিয়াকত আলী বলেন, এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তার না, তিনি আদালতে জবানবন্দি দেননি।

গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

আলোচিত এ মামলায় গত বছর ১৩ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ৮৩জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!