খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা
গরীব রোগীদের গলা কাটছে ক্লিনিকগুলো

যশোর হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগ টানা ১৫ দিন বন্ধ

যশোর প্রতিনিধি

যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের সকল কার্যক্রম গত ১৫ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার সৈয়দ সাজ্জাদ কামালের (৫৪) মৃত্যুতে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন হাসপাতালে আসা অসংখ্য অসুস্থ রোগী তাদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। আর এ সুযোগে মওকা লুটছে বাইরের ক্লিনিকগুলো।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে সৈয়দ সাজ্জাদ কামাল ছিলেন একমাত্র ডাক্তার। তার অকাল মৃত্যুতে পুনরায় আল্ট্রাসনো বিভাগ কবে চালু হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে করে প্রতিদিন হাসপাতালে আগত অসংখ্য রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা অল্প টাকায় হাসপাতাল থেকে এ সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে যাচ্ছে। আর এ সুযোগে ক্লিনিক মালিকরা গরীব রোগীদের গলা কাটছে।

অবশ্য দেখা যায়, হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়। দরজায় তালা ঝুলছে। লেখা রয়েছে ‘ডাক্তার সাহেব ছুটিতে আছেন’। অথচ সত্য কথা এটাই যে, ডাক্তার সাহেব মারা গেছেন। আলট্রাসনো করাতে সরকারি হাসপাতালের খরচ হয় একশ’ ১০ থেকে দুশ’ ২০ টাকা। অথচ একই আল্ট্রাসনো ক্লিনিকে করাতে গেলে খরচ হয় সাড়ে সাতশ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।

হাসপাতালে আসা অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ আবিদা সুলতানা জানান, হাসপাতালে তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে আসেন। বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। সোমবার হাসপাতালের গাইনি বিভাগে আসেন ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার তাকে বাচ্চার অবস্থা জানতে আল্ট্রাসনো করাতে বলেছেন। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আল্ট্রাসনো কক্ষের সামনে গিয়ে দেখেন তালা ঝুলছে। কেউ বলতে পারেনি কবে বা কখন এ বিভাগ খোলা হবে। কোনো উপায় না দেখে সাতশ’ টাকায় বাইরের একটি ক্লিনিক থেকে তিনি আল্ট্রাসনো করাতে বাধ্য হন। তার মতো একাধিক রোগী এ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। তারা হাসপাতালের অতি প্রয়োজনীয় এ বিভাগটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীক কুমার রায় জানান, গত ১৯ অক্টোবর থেকে আল্ট্র্রাসনো বিভাগ বন্ধ রয়েছে। তবে চালু আছে ইসিজি ও এক্স-রে বিভাগ। অতিদ্রুত এ বিভাগটি চালু করা হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারির মধ্যেও হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগ সচল রাখা ডাক্তার সৈয়দ সাজ্জাদ কামাল গত ১৮ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা উপসর্গ থাকায় তিনি ১৯ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। ২১ অক্টোবর করোনা পরীক্ষার জন্যে তিনি নমুনা দেন। নমুনা পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে। ২২ অক্টোবর তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রংপুরে নিজ বাড়িতে চলে যান। ২৩ অক্টোবর খুলনা থেকে তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ দেয়া হয়। বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৪ অক্টোবর রংপুর থেকে তাকে ঢাকার কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাসহ দু’দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু ক্রমাগত তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে গত ২৭ অক্টোবর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরে অক্সিজেন মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ভেন্ডিলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ অক্টোবর রাত দুটোর দিকে তিনি মারা যান। তার অসুস্থতার পর থেকে হাসপাতালের জরুরি এ বিভাগটি বন্ধ রয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!